নগর নৃবিজ্ঞান ও নগর নৃবিজ্ঞানের কিছু প্রত্যয়

এনথ্রোসার্কেলে নগর নৃবিজ্ঞান নিয়ে লিখেছেন সাব্বির হোসেন

সভ্যতার বিবর্তন ও নগরায়নের ফলে নৃবিজ্ঞান শাস্ত্রে নগর নৃবিজ্ঞান (Urban anthropology) একটি অন্যতম উদীয়মান ক্ষেত্র হিসেবে ধরা দিয়েছে। নগরায়নের ফলে মানুষ দিন দিন শহরের দিকে ধাবিত হচ্ছে। বর্তমানকালে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ শহরে বসবাস করতে শুরু করেছে, ফলে নৃতাত্ত্বিক গবেষণাগুলোও শহর-কেন্দ্রিক হচ্ছে। যে কারণে নগরকে নৃতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। শহুরে সামাজিক জীবন কীভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে, শহরের জায়গা এবং প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে মানুষকে প্রভাবিত করছে এবং বৈশ্বিক প্রবাহ ও সংযুক্ততার ফলে কোন কোন বিষয়গুলো শহর গঠন করছে, এসকল বিষয় নগর নৃতাত্ত্বিকদের মনোযোগ আকর্ষণ করছে। শাস্ত্র হিসেবে জন্মলগ্নে নৃবিজ্ঞান প্রধানত অপশ্চিমা ক্ষুদ্র সমাজ ও পরবর্তীতে গ্রামীণ সম্প্রদায়ের অধ্যয়ন করলেও বর্তমান সময়ে নৃতাত্ত্বিকদের গবেষণায় শহরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।

নগর নৃবিজ্ঞানের বিকাশের সাথে দুটি ঘটনা জড়িত– (১) দ্রুত বৈশ্বিক নগরায়ন এবং (২) নৃবিজ্ঞানের নিজস্ব ঘরানার পরিবর্তন।

মেসোপটেমিয়ার উত্থানের মধ্য দিয়ে যেখানে সুমেরীয় সভ্যতা ও ব্যবীলনীয় সভ্যতার মতো প্রাচীন সভ্যতার বিকাশ ঘটে। তবে সেসকল ‘সভ্যতা’ নগর- এর বিকাশ ঘটায় কিনা তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে শিল্প বিপ্লবের ফলে ইউরোপে ব্যাপক নগরায়ণ ঘটে। ইউরোপের শহরগুলোর কারখানায় কাজ করার জন্য তখন অনেক শ্রমিক ভিড় করতে শুরু করে। একবিংশ শতাব্দীতেও মানুষের এই শহরমুখী হওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। আর এই জনতাত্ত্বিক (Demographic) পরিবর্তন নৃতাত্ত্বিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এই সময়েই নগর নৃবিজ্ঞান আবির্ভূত হয়। পরবর্তীতে এটি উত্তর-উপনিবেশবাদের মতো বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করা নৃতাত্ত্বিকদের উত্তর-ঔপনিবেশিক নগরায়ণ অধ্যয়নে আগ্রহী করে তোলে। অনেকের মতে, বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে বিশ্বায়ন জোরালো হওয়ার সাথে সাথে শহুরে জীবনকে কেন্দ্র করে নৃতাত্ত্বিক আগ্রহ বেড়ে উঠে যা নগর নৃবিজ্ঞান শাখার বিকাশে অবদান রাখে।

নগর নৃবিজ্ঞান বিকাশের দ্বিতীয় মূল কারণ হলো নৃবিজ্ঞানের নিজস্ব ঘরানার পরিবর্তন। প্রারম্ভিক নৃবিজ্ঞান উপনিবেশবাদের সঙ্গে যুক্ত ছিল, যেটি কেবলমাত্র কোনো অঞ্চলের “স্থানীয় জনগোষ্ঠী”-কে অধ্যায়ন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে  নৃবিজ্ঞানে উপনিবেশ-কেন্দ্রিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া শুর হয়। সমালোচনামুলক নৃতাত্ত্বিকেরা (Critical anthropologists) “অন্য”-কে অধ্যয়ন করা এবং নিজের এলাকা ছেড়ে দূরবর্তী স্থানে অবস্থিত কোনো অঞ্চলে মাঠকর্ম করার প্রবণতার দিকটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন। তারা মূলত তাত্ত্বিকদের শিকার-সংগ্রহভিত্তিক সমাজ বা কৃষক (Peasant) সমাজের উপর দীর্ঘ দিনের আগ্রহের জায়গাটিকে প্রসারিত করতে চেয়েছিল এবং  শহুরে অর্থনীতিতে সামাজিক জীবনের প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দিয়েছিল। পশ্চিম ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু শহরে এই অনুশীলন শুরু হয়। এই পরিবর্তনের ফলে পাশ্চাত্যে ও বিশেষ করে আমেরিকায় নগর নৃবিজ্ঞানের বিকাশ ঘটে, যেখানে নৃতাত্ত্বিকেরা শহর এবং শহুরে জীবনযাপন নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। এভাবে নগর নৃবিজ্ঞানের আত্নপ্রকাশ ঘটে ঘটে।

নগর নৃবিজ্ঞান সাধারণত নৃবিজ্ঞানের একটি শাখা হিসেবে বিকাশ লাভ করলেও একে নৃবিজ্ঞান থেকে আলাদা করে দেখা হয়। এমনকি এটি নগর অধ্যয়ন(Urban Studies), নগর সমাজবিজ্ঞান(Urban Sociology) এবং নগর ভূগোল (Urban Geography) থেকেও আলাদা শাস্ত্র হিসেবে পরিচিত। যেসকল উপাদানের উপর ভিত্তি করে নগর নৃবিজ্ঞানের নগর চিহ্নিত করা হয় সেগুলো হলো জনসংখ্যার আকার (Size), জনসংখ্যার ঘনত্ব (Density), জনসংখ্যার বৈচিত্রতা (Heterogeneity), পরিচয়হীনতা (Anonymity), অসমতা (Inequality), সামাজিক একাকিত্ব (social isolation) ইত্যাদি।

শহুরে পরিবেশে

নগর নৃতাত্ত্বিকরা প্রায়শই কিছু প্রশ্ন নিয়ে ভাবেন। যেমনঃ শহর কীভাবে মানুষের পরিচয় এবং সামাজিক সম্পর্কগুলোকে প্রভাবিত করে? ব্যস্ত, বৈচিত্র্যময় এবং অসম শহরগুলো কিভাবে নাগরিক অধিকার বৈষম্যের সূচনা করে? শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কীভাবে ক্ষমতা সম্পর্ককে প্রভাবিত করে এবং ক্ষমতার গতিশীলতা কীভাবে এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে আকৃতি দেয়?

নগর নৃবিজ্ঞানীরা অন্যান্য পদ্ধতির পাশাপাশি এথনোগ্রাফির মাধ্যমে শহরকে অধ্যয়নের উপর জোর দেন। এথনোগ্রাফির অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণ শহুরে জীবনের গতিশীল ও সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে। এটি গবেষকদের এমন নিবিড় জ্ঞানের মানচিত্র তৈরি করতে সহায়তা করে যা সচারাচর মৌখিকভাবে প্রকাশিত হয় না এবং শহরের সামাজিক জীবনকে গঠন করে এমন অনেক ক্ষুদ্র বিষয়কেও স্পষ্ট করতে পারে।

নগর নৃবিজ্ঞান মূলত শহরের মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে দেখে। এছাড়া নগর নৃবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হলো যে এটি শহরের মানুষের সামাজিক সম্পর্ক ও শহরে বসবাসরত মানুষের জীবনের সম্পূর্ণ জটিলতাকে দেখে। শহরের মানুষ কীভাবে তাদের বৈচিত্র্যময়, অসম এবং ক্রমাগত পরিবর্তনশীল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবন নির্মাণ করে তা দেখার চেষ্টা করে। শহরের মানুষ কী কী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয় এবং এই চ্যালেঞ্জগুলোর সাথে অভিযোজন করে কীভাবে তারা শহরের মতো জায়গায় নিজেদের স্থানটা বজায় রাখে সেটি নিয়ে আলোচনা করে। এথনোগ্রাফিক পদ্ধতি ব্যবহার করে, যেমনঃ মানুষের সাথে সময় কাটিয়ে, আচার-আচরণ পর্যবেক্ষণ করে এবং তাদের দৈনন্দিন কাজে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে নগর নৃতাত্ত্বিকরা নগর জীবন আসলে কীভাবে সচল থাকে এবং নগর জীবনের অজানা ও অনানুষ্ঠানিক বিষয়গুলোকে গভীর ও সামগ্রিকভাবে বোঝার চেষ্টা করে।

নগর নৃবিজ্ঞানের মূল আলোচনাই যেহেতু শহর কেন্দ্রিক তাই ‘শহর’কে জানাটা জরুরি। প্রাথমিকভাবে শহর বলতে পশ্চাদভূমির (hinterland) বিপরীতে থাকা কোনো স্থান বা জায়গাকে বোঝানো হতো। এই দৃষ্টিতে শহর ছিল স্থানীয় ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু এবং এমন একটি স্থান যেখানে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক এবং ধর্মীয় কার্যক্রমের প্রতি বেশি মনোযোগ দেয়া হতো। অন্যান্য সংজ্ঞায় শহরকে মানুষের উপস্থিতি এবং জনতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যমন্ডিত পরিবেশকে বুঝানো হতো, যেখানে ভীড়যুক্ত পরিবেশ তৈরি হয় এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব অধিক থাকে। তবে শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা দিয়েছে শিকাগো স্কুলের সমাজবিজ্ঞানী লুইস ওয়ার্থ। তিনি শহরের ৩টি মূল বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছে – জনসংখ্যার আকার (size), ঘনত্ব (density) এবং জনসংখ্যার অসমসত্ত্বতা (population heterogeneity)। তার মতে,  “সমাজতাত্ত্বিক উদ্দেশ্যে একটি শহরকে তুলনামূলকভাবে বড়, ঘনবসতিপূর্ণ এবং সামাজিকভাবে বৈচিত্র্যময় ব্যক্তিদের স্থায়ী বসতি হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে।”

লুইস ওয়ার্থ নগরবাদকে জীবন ব্যবস্থা হিসেবে (Urbanism as a way of life) আলোচনা করতে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সম্পর্ক এবং মনোভাবের দিকেও মনোনিবেশ করেছেন। তিনি শহরকে গ্রামীণ এলাকার বিপরীতে স্থান দিয়েছেন এবং বলেছেন যে গ্রামে বন্ধু, পরিবার এবং স্থানীয় সদস্যদের মধ্যে অন্তরঙ্গ এবং কাছাকাছি সম্পর্ক থাকলেও শহরের মানুষের মধ্যে ক্ষণস্থায়ী, আনুষ্ঠানিক এবং ব্যবসায়িক সম্পর্ক থাকে, যেখানে মানুষ খুব বেশি আমোদ-প্রমোদ চায় না। সাম্প্রতিক সময়ে তাত্ত্বিকেরা শহরকে একটি স্থান হিসেবে না দেখে বরং একটি সামাজিক-বস্তুগত-প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়া বা একটি ‘সমাবেশ’ হিসাবে দেখতে শুরু করেছেন। এই দৃষ্টিকোণ থেকে শহর হলো মানুষ, প্রাণী, অর্থ, জিনিসপত্র, ধারণা এবং প্রযুক্তির বিভিন্ন রকম গতিশীল এবং অস্থায়ী নেটয়ার্ক ও প্রবাহের একটি মিথস্ক্রিয়া। 

নগর নৃবিজ্ঞানের কিছু প্রত্যয়

  1. নগরবাদ এবং নগরায়নঃ নগরবাদ (Urbanism) এবং নগরায়ন (Urbanization) নগর নৃবিজ্ঞানের দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয় যেটি শহরের বিকাশ এবং শহরের মানুষের জীবনধারা ব্যাখ্যা করতে সহায়তা করে। নগরবাদ বলতে শহরে গড়ে ওঠা জীবনধারা এবং সামাজিক প্যাটার্নসমূহকে বোঝায়। নগরবাদ একটি শহরে বসবাস করায় মানুষদের আচরণ, সম্পর্কগুলো এবং দৈনন্দিন রুটিন কীভাবে পরিবর্তিত হয় তা ব্যাখ্যা করে। শহরে বসবাস করা লোকেরা প্রায়শই সংস্কৃতি, ভাষা এবং পটভূমির দিক থেকে অনেক বেশি বৈচিত্র্যময় হয় এবং জীবন বিভিন্ন পেশা, সেবাসমূহ এবং সামাজিক নেটওয়ার্কগুলোর সাথে সাথে দ্রুতগতিতে কাঠামোগতভাবে পরিচালিত হতে থাকে। নগরবাদ, শহরগুলো যেভাবে সংগঠিত হয় যেমনঃ আশেপাশের এলাকা, জনসাধারণের স্থান এবং পরিবহন ব্যবস্থা ইত্যাদি এবং এই পরিবেশের মধ্যে লোকেরা কীভাবে যোগাযোগ বজায় রাখে তাও অন্তর্ভুক্ত করে। নগর নৃতত্ত্ববিদরা দেখেন কিভাবে নগর জীবন মানুষের মূল্যবোধ, মিথস্ক্রিয়া এবং পরিচয়কে প্রভাবিত করে। অন্যদিকে, নগরায়ন (Urbanization) হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে গ্রামীণ অঞ্চলগুলো শহরে পরিণত হয়, বা আরও বেশি লোক আসার সাথে সাথে অর্থ্যাৎ অভিবাসনের ফলে শহরগুলো ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। এই প্রক্রিয়ায় বাড়িঘর, রাস্তা-ঘাট এবং অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি সামাজিক পরিবর্তন যেমনঃ জনসংখ্যার ঘনত্ব বৃদ্ধি এবং নতুন অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের বিকাশ ঘটে। নগরায়ন তখনই ঘটে যখন প্রায়শই মানুষ উন্নত চাকরি, শিক্ষা এবং জীবনযাত্রার অবস্থা উন্নত করার জন্য গ্রামাঞ্চল থেকে শহরে চলে যায়। নগর নৃতাত্ত্বিকরা নগরায়ন অধ্যায়ন করার মাধ্যমে আবাসন, কর্মসংস্থান, পরিষেবা এবং সামাজিক সম্পর্কের উপর শহুরে প্রবৃদ্ধির প্রভাব পর্যালচনা করে।  সংক্ষেপে বলা যায় যে নগরবাদ হলো শহরের জীবনযাত্রার ধরণ আর নগরায়ন হলো শহরের বিকাশ এবং ক্রমাগত আরও বেশি শহুরে হওয়ার প্রক্রিয়া। নগর নৃবিজ্ঞানীরা আধুনিক শহরগুলোতে নগরবাদ এবং নগরায়ণ উভয়ই কীভাবে মানুষের অভিজ্ঞতাকে আকৃতি দেয় তা অন্বেষণ করেন।
  • হেটেরোজেনিটিঃ হেটেরোজেনিটি (Heterogeneity) বলতে মূলত বৈচিত্র্যময় এবং ভিন্ন ভিন্ন ব্যাক্তিত্বের ধরণ, সামাজিক পটভূমি(Backgrounds) এবং স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যসমুহকে একত্রে নির্দেশ করা হয় যা সাধারনত শহুরে সামাজিক পরিবেশে লক্ষ্য করা যায়। এই বৈচিত্র্যময়তা ঐতিহ্যবাহী শ্রেণি সারিকে (caste line) ভেঙে দেয় এবং শ্রেণী কাঠামোকে জটিল করে তোলে। ফলে সমজাতীয় এবং সমন্বিত সমাজগুলোর (integrated socities) তুলনায় আরও জটিল এবং পৃথক সামাজিক কাঠামো তৈরি হয়। ভিন্ন ভিন্ন মানুষ এবং গোষ্ঠীর সাথে শহরের মানুষের মিথষ্ক্রিয়ার ফলে একটি পরিশীলিত ও বিশ্বজনীন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয় তবে এটি সামাজিক অস্থিতিশীলতা এবং তরলতা (fluidity) বৃদ্ধিতেও অবদান রাখে। কেননা শহরের মানুষ বা গোষ্ঠীগুলো ব্যক্তির সম্পূর্ণ আনুগত্য ধারণ করে না। এই বৈচিত্র্যতার ফলস্বরূপ এমন একটি জনসংখ্যা তৈরি করে যেখানে সামাজিক বন্ধন অনেক ক্ষণস্থায়ী, ভঙ্গুর এবং বজায় রাখা কঠিন। লুইস ওয়ার্থ “Urbanism as a way of life” বর্ননা করতে হেটেরোজেনিটিকে শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
  • বস্তিঃ শহর সৃষ্টির সময় থেকেই বস্তির অস্তিত্ব আছে এবং বস্তির উপস্থিতি দীর্ঘকাল ধরেই বিভিন্ন সাহত্যে নথিভুক্তকরা হয়ছে। “Slum” বা “বস্তি” শব্দটি মূলত নিম্নমানের এবং নোংরা পরিবেশে বসবাসকারী মানুষকে বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়। যেমনঃ Cities Alliance (2006)-এ বস্তিকে “শহরের অবহেলিত অংশ যেখানে আবাসন ও জীবনযাত্রার অবস্থা অত্যন্ত খারাপ” হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। বস্তিগুলোর অধিকাংশই সাধারণত স্বল্প উন্নত দেশগুলোতে লক্ষ্য করা যায়। কেবল একটি প্রত্যয় হিসেবে বস্তির একাধিক অর্থ থাকতে পারে।

বস্তির সংখ্যা বৃদ্ধি মানুষ এবং পরিবেশ-প্রতিবেশের উপর একটি বড় প্রভাব ফেলছে। বস্তিতে বিদ্যমান পরিস্থিতি যেমন প্রাকৃতিক ও মানব সৃষ্ট বিপর্যয় এবং অনুপযুক্ত বসবাসের মতো বিষয়গুলো থেকে বিভিন্ন হুমকীর মধ্যে জীবনযাপন বস্তিবাসীর উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। এর প্রধান কারণ হলো আনুষ্ঠানিক সম্প্রদায়ের (Formal Communities) তুলনায় বস্তিবাসীদের বন্যা ও ভূমিকম্পের মতো বিপর্যয় থেকে উদ্ধার হওয়ার সক্ষমতা কম। আবার, বস্তিবাসীরা নিজেরাই মৌলিক পরিষেবার অভাবে তাদের পরিবেশকে প্রভাবিত করে। ফলে মাটি দূষণ, বায়ু দুষণ এবং পানি দুষণের মতো সমস্যা তৈরি হয়। নগর নৃবিজ্ঞানে, বস্তি হলো একটি শহরের দরিদ্র, জনাকীর্ণ একটি এলাকা যেখানে মানুষ খারাপ পরিস্থিতিতে বসবাস করে। এই অঞ্চলগুলোতে প্রায়শই বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন এবং যথাযথ আবাসন ব্যবস্থার মতো মৌলিক পরিষেবার অভাব থাকে। বস্তিগুলো সাধারণত তখনই গড়ে ওঠে যখন অনেক মানুষ দ্রুত শহরে চলে যায় কিন্তু শহরটিতে পর্যাপ্ত সম্পদ বা চাকরির সরবরাহ থাকে না। বস্তিতে বসবাসকারী লোকেরা সস্তা উপকরণ ব্যবহার করে তাদের নিজস্ব বাড়ি-ঘর তৈরি করে এবং তারা যে জমিতে বসবাস করে সেখানে তাদের সাধারনত আইনি অধিকার থাকে না। দারিদ্র্য, স্বাস্থ্য সেবার অভাব এবং অনিরাপদ পরিবেশের কারণে বস্তিতে জীবনযাপন করা প্রায়শই কঠিন। নগর নৃতাত্ত্বিকরা বস্তিগুলো অধ্যয়ন করে বুঝতে চেষ্টা করেন যে মানুষ কীভাবে এই চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির সাথে অভিযোজন করে এবং কীভাবে তারা অনেক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও বস্তির মতো এলাকায় সম্প্রদায় (community) তৈরি করে। এছাড়াও তারা সরকার, নগর পরিকল্পনা এবং বস্তির মানুষের মধ্যে সম্পর্কের দিকটিও তুলে আনার চেষ্টা করে।

  • দারিদ্র্যঃ নগর নৃবিজ্ঞানে দারিদ্র্য (poverty) বলতে সেই অবস্থাকে বোঝায় যখন মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ, খাদ্য, আশ্রয়, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক বিষয়গুলোর অপ্রতুলতা থাকে। শহরের দারিদ্র্য গ্রামাঞ্চলের দারিদ্র্যের থেকে আলাদা হতে পারে কারণ শহুরে পরিবেশে জীবনযাত্রার ব্যয় সাধারণত বেশি হয় এবং চাকরি ও আবাসনের জন্য প্রতিযোগিতাও বেশি। নগর নৃতাত্ত্বিকেরা শহরের ব্যক্তি, পরিবার এবং সম্প্রদায়কে কীভাবে দরিদ্রতা প্রভাবিত করে তা বোঝার জন্য দারিদ্র্য বিষয়টি অধ্যায়ন করেন। তারা অন্বেষণ করে যে কীভাবে দরিদ্র মানুষ শহরে বেঁচে থাকে, কীভাবে তারা কাজ পায় এবং কীভাবে তারা মৌলিক পরিষেবার মতো বিষয়গুলোতে সীমিত সুযোগ, জনাকীর্ণ বাসস্থান এবং সামাজিক বৈষম্যের মতো চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করে। শহর অঞ্চলে দারিদ্র্য প্রায়শই নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় কেন্দ্রীভূত হয়। যেমনঃ বস্তি বা অনানুষ্ঠানিক বসতি কিংবা যেখানে লোকেরা অতিরিক্ত ঘনবসতিপূর্ণ এবং অনিরাপদ পরিস্থিতিতে বসবাস করে। নগর নৃতাত্ত্বিকরা সরকারী নীতি, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং নগর পরিকল্পনা কীভাবে শহুরে দারিদ্র্য হ্রাস করতে অবদান রাখে সেদিকেও নজর দেন।

অস্কার লুইস তাঁর নিবন্ধ “দ্য কালচার অফ পোভার্টি”-তে শহুরে দারিদ্র্যকে সংজ্ঞায়িত করেছেন যাকে তিনি “culture of poverty” বা দারিদ্র্যের সংস্কৃতি বলে অভিহিত করেছেন। এই ধারণাটি দারিদ্যের যে অর্থনৈতিক বিষয়টি রয়েছে তা থেকে আলাদা এবং সময়ের সাথে সাথে শহরের বস্তি সম্প্রদায় বা নিম্ন আয়ের মানুষের আচরণ, মূল্যবোধ এবং সামাজিক কাঠামোর নির্দিষ্ট প্যাটার্নগুলো কীভাবে বিকশিত হয় তা অনুসন্ধান করে। লুইস যুক্তি দেন যে এই সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলো-যেমন সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বিচ্ছিন্নতা, বর্তমান সময়ের দিকে মনোনিবেশ করা, সঞ্চয়ের অভাব এবং প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানের প্রতি শত্রুতা-প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে এবং শহুরে দরিদ্র পরিবারের জীবনে গেঁথে আছে। এই অর্থে দারিদ্র্য কেবল সম্পদের অভাব নয় বরং দরিদ্র ব্যক্তির নিজস্ব যুক্তি এবং অভিযোজন কৌশলসহ একটি জটিল উপসংস্কৃতি (subculture)। যদিও এই তত্ত্ব বিভিন্ন কারণে সমালোচিত হয়েছে। প্রথমত “দারিদ্র্যের সংস্কৃতি” বা “culture of poverty” তত্ত্বটি প্রায়শই দরিদ্র মানুষকে তাদের পরিস্থিতির জন্য দোষারোপ করার জন্য সমালোচিত। দ্বিতীয়ত এ তত্ত্বটি ইঙ্গিত দেয় যে দরিদ্র মানুষদের আচরণ এবং মূল্যবোধ তাদের দরিদ্র করে রাখে, যেটি সমস্যাজনক। এছাড়াও এ তত্ত্বের সমালোচকরা আরও বলছেন যে এটি বৈষম্য, সুযোগের অভাব এবং অর্থনৈতিক বৈষম্যের মতো বড় সমস্যাগুলোকে উপেক্ষা করে। তারা যুক্তি দেন যে এ তত্ত্বটির এপ্রোচ খুব সহজ ও সাধারণ যেটি প্রায়শই দারিদ্রতার কষাঘাতে থাকা মানুষের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে উপেক্ষা করে। তবে এই ধারণাটি নগর নৃবিজ্ঞানের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত, যা শহুরে পরিবেশে মানুষ কীভাবে জীবনযাপন করে, অভিযোজন করে এবং সম্প্রদায় গঠন করে তা অধ্যয়ন করে। নগর নৃতাত্ত্বিকরা শহরের মানুষের, বিশেষ করে প্রান্তিক ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনকে রূপদানকারী সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণগুলো বিশ্লেষণ করেন। সংক্ষেপে বলা যেতে পারে, লুইসের মতে শহুরে দারিদ্র্য কেবল একটি অর্থনৈতিক অবস্থা নয়, একটি সংস্কৃতিও, যা নগর নৃবিজ্ঞানে অধ্যয়নের জন্য গভীরভাবে প্রাসঙ্গিক কারণ এটি দারিদ্র্য কীভাবে শহুরে জীবন এবং পরিচয়কে রূপ দেয় সে সম্পর্কে ধারণা প্রদান করে।

  • অভিবাসনঃ অভিবাসন (Migration) বলতে চাকরি, শিক্ষা বা উন্নত জীবনযাত্রার মতো উন্নত সুযোগের সন্ধানে প্রায়শই গ্রামীণ অঞ্চল থেকে শহরে বা এক শহর থেকে অন্য শহরে মানুষের গমনকে বোঝায়। শহরগুলোর বৃদ্ধি ও উন্নয়নে (Growth and Development) অভিবাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন ধরনের অভিবাসন রয়েছেঃ (i) গ্রামাঞ্চল থেকে শহরে (Rural to Urban Migration) অভিবাসন ঘটে যখন লোকেরা গ্রামাঞ্চল থেকে শহরে চলে যায়। সাধারণত দারিদ্র্য থেকে বাঁচতে বা শহরাঞ্চলে জীবনযাত্রার মান উন্নত করার জন্য আরও বেশি সুযোগ রয়েছে এমন ভাবনা থেকেই অভিবাসন করে। (ii) আন্তর্জাতিক অভিবাসন (International Migration) ঘটে যখন মানুষ বিভিন্ন কারণে (যেমনঃ চাকরি, শিক্ষা বা জীবনযাত্রার মান উন্নত করার জন্য) এক দেশ থেকে অন্য দেশে বা বড় শহরে চলে যায়।

নগর নৃতাত্ত্বিকরা অভিবাসন অধ্যয়ন করে অভিবাসী এবং অভিবাসন করা স্থান কীভাবে অভিবাসনের ফলে প্রভাবিত হয় তা বোঝার চেষ্টা করে। অভিবাসীরা কীভাবে নগর জীবনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়, কীভাবে তারা আবাসন ও কাজ খুঁজে পায় এবং কীভাবে তারা তাদের স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বজায় রাখে ইত্যাদি বিষয়গুলোর দিকে তারা নজর দেয়। অভিবাসনের ফলে বৈচিত্র্যময়, বহু-সংস্কৃতির মতো শহরের বিকাশ ঘটে। তবে অভিবাসনের ফলে ঘনবসতি, সম্পদের জন্য প্রতিযোগিতা এবং স্থানীয় ও নবাগতদের মধ্যে সামাজিক দ্বন্দের মতো চ্যালেঞ্জও তৈরি করতে পারে।

  • জেন্ট্রিফিকেশনঃ জেন্ট্রিফিকেশন (Gentrification) বলতে শহরের কোনো অঞ্চলের রুপান্তরের প্রক্রিয়াকে বোঝায় বিশেষ করে ধনী বাসিন্দা এবং ব্যবসায়ের প্রবাহের মাধ্যমে শহরের অভ্যন্তরীন এলাকা বা শ্রমিক-শ্রেণির এলাকার রুপান্তরের সাথে এই প্রত্যয়টি জড়িত। এই পরিবর্তন প্রায়শই সম্পত্তির মূল্য বৃদ্ধি, বাসা ভাড়া বৃদ্ধি এবং সেই অঞ্চলের সামাজিক কাঠামো পরিবর্তনের বিষয়টিকে প্রভাবিত করে। জেন্ট্রিফিকেশনের ফলে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, উন্নত ভবন বৃদ্ধি, নতুন ব্যবসার মতো পরিবর্তনও ঘটে। তবে এটি প্রায়শই মূল জনগোষ্ঠীকে স্থানান্তর করতে বাধ্য করে এবং তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করে। এর ফলে স্থানীয় লোকজন তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি হারায় এবং ব্যবয়বহুল বুটিকস বা ক্যাফের মতো বিশালবহুল সংস্কৃতির আবির্ভাব ঘটে। নৃতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে, জেন্ট্রিফিকেশনকে বিভিন্ন সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক প্রভাবসহ একটি জটিল বিষয় হিসেবে অধ্যয়ন করা হয়। নগর নৃবিজ্ঞান জেন্ট্রিফিকেশনের ফলে শহরের আশেপাশের অঞ্চলের মানুষের স্থানচ্যুতি(displacement), সাংস্কৃতিক পরিবর্তন এবং অর্থনৈতিক বৈষম্যের মতো বিষয়ের রূপান্তর কীভাবে সেখানে বসবাসকারী লোকদের প্রভাবিত করে তা নিয়ে আলোচনা করে।
  • বিশ্বায়নঃ বিশ্বায়ন(Globalization) বলতে পণ্য, তথ্য, সংস্কৃতি, অর্থ এবং মানুষের প্রবাহের(flow) মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে শহর ও মানুষের ক্রমবর্ধমান আন্তঃসংযোগকে বোঝায়। এটি একটি শহরের অর্থনীতি, সংস্কৃতি এবং সামাজিক কাঠামোকে পরিবর্তন করার মাধ্যমে প্রভাবিত করে। অর্থনৈতিক পরিবর্তন, সাংস্কৃতিক বিনিময়(Cultural Exchange), অভিবাসন, নগর উন্নয়ন, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি ইত্যাদির মাধ্যমে নগরে বিশ্বায়ন ঘটে। নগর নৃতাত্ত্বিকরা কীভাবে বিশ্বায়ন ইতিবাচক ও নেতিবাচকভাবে নগর জীবনকে রুপ দিচ্ছে তা অধ্যয়ন করার চেষ্টা করে। কীভাবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা স্থানীয় অর্থনীতির উপরে প্রভাব ফেলছে, কীভাবে সামাজিক বিনিময়(Cultural Exchange) নগরের বসবাসরত মানুষের পরিচয়কে পরিবর্তন করে এবং অভিবাসন এবং বহু-সংস্কৃতিবাদের মাধ্যমে নগর সম্প্রদায়কে রুপ দান করে তার উপর দৃষ্টি দেয়। মূলত বিশ্বায়নের ফলে শহরের মানুষ কীভাবে বৈশ্বিক ব্যবস্থার সাথে নিজেদের যুক্ত রাখে তা নিয়েই নগর নৃবিজ্ঞান আলোচনা করে।

এছাড়াও নগর অর্থনীতি, নগর প্রতিবেশসহ আরও অনেক প্রত্যয় রয়েছে যেগুলো নগর নৃবিজ্ঞানকে সমৃদ্ধ করেছে।

নগর নৃবিজ্ঞানের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

নগর নৃবিজ্ঞান মূলত শহুরে সমাজ ও জীবনকে অধ্যয়ন করে। শহরগুলোর বিকাশ এবং পরিবর্তনের সাথে সাথে নগর নৃবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অভিবাসন, বৈষম্য এবং প্রযুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। বিশ্বায়নের দ্বারা প্রভাবিত শহরগুলোতে অভিবাসন বৃদ্ধি পাছে, ফলে বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠী কীভাবে একসাথে বাস করে এবং নতুন পরিচয় গঠন করে তা নিয়ে নৃতাত্ত্বিকদের অধ্যয়নের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। জেন্ট্রিফিকেশন অনেক এলাকাকে পরিবর্তন করছে ফলে নগর নৃবিজ্ঞানের গবেষকেরা জেন্ট্রিফিকেশন কীভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষের জীবন এবং আবাসনকে প্রভাবিত করে তা নিয়ে গবেষণা করতে পারছে। বর্তমান সময়ে জলবায়ু পরিবর্তন শহরগুলোকে ভিন্ন পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে বাধ্য করছে, ফলে শহরে বসবাসরত বিভিন্ন সম্প্রদায় কীভাবে এই পরিবেশগত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করছে এবং অভিযোজন করছে, তা নগর নৃবিজ্ঞানীরা অধ্যয়ন করতে পারবে। এছাড়াও দৈনন্দিন জীবন পরিচালনার জন্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে এমন অনেক আধুনিক শহরের উদ্ভবের ফলে সামাজিক মিথস্ক্রিয়া এবং শহরের প্রশাসনের উপর তথ্য ও প্রযুক্তির প্রভাব অধ্যয়নেরও নতুন সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এছাড়াও বর্তমান সময়ে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন মহামারী, যেমনঃ কোভিড-১৯ মহামারী শহরগুলো পরিচালনার পদ্ধতি পরিবর্তন করেছ, ফলে নগর নৃতাত্ত্বিকদের মহামারী পরবর্তী সময়ে একটি শহর কীভাবে স্বচ্ছলতা নিয়ে আসে তা নিয়েও কাজ করতে পারবে। সর্বোপরি শহরগুলোতে ধীরে ধীরে বহু-সংস্কৃতির বিকাশ হওয়ার সাথে সাথে শহুরে মানুষ কিভাবে তাদের সাংস্কৃতিক পার্থক্যগুলো সামলে নিয়ে জীবন পরিচালনা করে এবং বিশ্বজনীন সমাজ গড়ে তোলে সে বিষয়ে নগর নৃতাত্ত্বিকেরা গবেষণা করতে পারবে।

তথ্যসূত্র

  1. Jaffe, R. and De Koning, A., 2022. Introducing urban anthropology. Routledge.
  2. Wirth, L., 1938. Urbanism as a Way of Life. American journal of sociology44(1), pp.1-24.
  3. Lewis, O., 2017. The culture of poverty. In Poor Jews (pp. 9-25). Routledge.
  4. Mahabir, R., Crooks, A., Croitoru, A. and Agouris, P., 2016. The study of slums as social and physical constructs: Challenges and emerging research opportunities. Regional Studies, Regional Science3(1), pp.399-419.
  5. Basham, R. and DeGroot, D., 1977. Current approaches to the anthropology of urban and complex societies.