কিভাবে প্রবন্ধ লিখতে হয়ঃ নৃবিজ্ঞানীদের জন্য একটি দিকনির্দেশনা

[এনথ্রোসার্কেল কেবলমাত্র কন্টেন্ট শেয়ার করা নয়, নৃবিজ্ঞানের লেখক তৈরিতেও তৎপর। এইজন্যই নৃবিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখির পাশাপাশি লেখালেখির নিয়ম-কানুন কিংবা কৌশল নিয়েও কাজ করতে চাই আমরা। তার সূত্র ধরেই এবার নৃবিজ্ঞানবিষয়ক ওয়েবসাইট সাপিয়েন্সে প্রকাশিত  নিকোলা জোনসের লেখা “How to Write an Essay: A Guide for Anthropologists” -এর অনুবাদ ছাপানো হলো। আমাদের জন্য লেখাটি অনুবাদ করেছেন আতেকা জোয়ার্দার । আশা করা যায়, এই প্রবন্ধটি তরুন লেখকদের জন্য উপকারী হবে]

‘পাবলিশ কিংবা প্যারিশ’ এই মন্ত্রবাক্য জানা একাডেমিকরা লেখালেখির দক্ষতা আর অনুশীলনের সাথে অবশ্যই পরিচিত। কিন্তু নবিশ পাঠকদের জন্য লেখার একটা নতুন ধরণ তৈরির  চেষ্টা করা, প্রতিটা শব্দ চয়ন থেকে শুরু করে একটি সম্পূর্ণ প্রবন্ধ লেখা পর্যন্ত- পুরো ব্যাপারটাই একটা ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জ, এমনকি একজন অভিজ্ঞ অধ্যাপকের জন্যও এটা বেশ কঠিন হতে পারে। 

আপনি যদি চেষ্টা করেও সফল না হন, হতাশ হওয়া চলবে না। আমি সহ সেপিয়েন্সে বিশেষজ্ঞ সম্পাদকদের একটি দল রয়েছে, যাদের কিনা একাডেমিক শব্দের সাথে লড়াই করে সেগুলোকে অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ, স্পষ্ট এবং আকর্ষণীয় প্রবন্ধ আকারে লেখার ক্ষেত্রে দশকেরও বেশি সময়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে।  

আমরা সেপিয়েন্সে যেসব প্রশ্ন পাই তার মধ্যে বহুল প্রচলিত একটি প্রশ্ন হলো- “কিভাবে আমি একটি প্রবন্ধ লিখতে পারি?” এই লেখাটির মাধ্যমে প্রবন্ধ লেখার কাঠামো এবং শুরু করার কৌশল নিয়ে ধারণা পাওয়া যাবে।  

লেখা শুরু করার পূর্বে দুটি বিষয় ভালোভাবে জেনে নেওয়া দরকারঃ আপনার পাঠকবর্গ এবং বিষয়বস্তু। এই বিষয় গুলো সম্পর্কে ধারণা থাকলে অন্য বিষয়গুলোও সহজ হয়ে যাবে। একবার যদি আপনি এই দুইটি মূল উপাদান নিয়ে ধারণাগুলি আয়ত্ত করতে পারেন, তাহলে আপনি প্রায় যে কোনো প্রবন্ধের উপর দখল আনতে পারেন।  

সেপিয়েন্সের প্রধান উদ্দেশ্যই হচ্ছে সাধারণ পাঠকরা। আমাদের পাঠকদের মধ্যে অল্প কয়েকজন  নৃবিজ্ঞানী হলেও, অধিকাংশই তা নয়। আবার একজন পাঠকের কথা চিন্তা করুন যিনি অনেক বুদ্ধিমান কিন্তু আপনার অধীত শাস্ত্রের ব্যাপারে অনভিজ্ঞ। মনে রাখবেন, কেউ একজন নৃবিজ্ঞানী হলেও আপনার বিষয়ক্ষেত্র, আপনার দেশের রাজনীতি বা গবেষণার জায়গা বা আপনাদের এলাকার বিশেষত্বের ব্যাপারে তেমন কিছু নাও জেনে থাকতে পারেন। আপনার রচনা হতে হবে ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ এবং অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন যেটা কিনা আপনার সহকর্মীদের কাছে অনেক তথ্যবহুল এবং সূক্ষ্ম দৃষ্টিসম্পন্ন বলে মনে হবে, কিন্তু সেই সাথে এটায় লেখাটির মূল পটভূমি এবং প্রসঙ্গ ভালোভাবে অন্তর্ভুক্ত থাকবে যাতে যে কেউ সহজে এগুলো অনুসরণ করতে পারে। 

একটি সহজ উদাহরণ দিলে ব্যাপারটি পরিষ্কার হবে। ধরা যাক, আপনি একটা ককটেইল পার্টিতে আছেন এবং আপনাদের কথোপকথন এমন একটি বিষয়ে গিয়ে ঠেকেছে, যেটা সম্পর্কে আপনি অনেক কিছু জানেন। আপনি কথোপকথনে কিছু সূক্ষ্মতা যুক্ত করতে চান। আপনি যে ব্যক্তির সাথে কথা বলছেন তাকে চমৎকৃত আর আনন্দিত করতে চান এবং বিষয়টা সম্পর্কে অবহিত করতে চান। আপনাকে এই মনোভাব নিয়েই হাতে কলম নেয়া উচিৎ (অথবা কিবোর্ডে লেখা শুরু করা উচিৎ)। 

মনে রাখবেন আপনি কোনো প্রাতিষ্ঠানিক বার্তা, পত্র বা আবেদন পত্র লিখছেন না। সেখানে আপনার প্রাথমিক উদ্দেশ্য এটা থাকবেনা যে, আপনাকে খুব বর্ণনামূলক কিছু লিখতে হবে অথবা আপনার সহকর্মীদের বা পিয়ার রিভিউয়ারদের আকৃষ্ট করতে হবে কিংবা অন্য ক্ষেত্রে মুন্সিয়ানা দেখাতে হবে। মূলত, অর্থহীন কথা এবং আনুষ্ঠানিক উদ্ধৃতি এখানে নিষ্প্রয়োজন। 

সেপিয়েন্সের পাঠকরা আপনার লেখা এই কারণে পড়ে না যে- তারা আপনার লেখা পড়তে বাধ্য, তারা নিজের ইচ্ছাতেই লেখাগুলো পড়ে। তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করুন এবং তা ধরে রাখুন। অন্যদের চেয়ে নৃবিজ্ঞানীরাই এই বিষয়ে সবচেয়ে ভালো ধারণা রাখেন যে, একটি ক্যাম্প ফায়ারের উজ্জ্বল ঘটনাসমূহ বর্ণনা করতে এবং শুনতেই মানবজাতির আবির্ভাব ঘটেছে। এই জ্ঞানটি কাজে লাগান এবং পরিপূর্ণ চরিত্র, চমক এবং আকস্মিকতার সমন্বয়ে একটি গল্প যাতে রচিত হয়, এটা নিশ্চিত করুন। 

নৃবিজ্ঞানীরা এথনোগ্রাফিক গবেষণা করে থাকে, এই কাজটি অনেকটা কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক খনন করার মতোই। যেখানে নির্ধারিত ব্যক্তিটি যথেষ্ট কাঠখড় পুড়িয়েই সঠিকভাবে  কাজটি করে। বেচারা রসায়নবিদের প্রতি মায়া লাগে, যিনি মৌল আর পরমাণুর মতো জিনিসিপত্র নিয়ে কাজ করেন! 

লেখার ক্ষেত্রে পরবর্তী মূল বিষয়টি হচ্ছে একটা বিষয়স্তু থাকা। আপনি একটা বিষয় সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারেন, কিন্তু একটা প্রবন্ধ লেখার ক্ষেত্রে লেখককে  শুধুমাত্র কোনো টপিক সম্পর্কে ধারণার দেওয়ার চেয়েও বেশিকিছু করতে হয়।  প্রবন্ধ হতে হলে প্রতিটা দৃষ্টিভঙ্গি ভালোভাবে (সম্ভবত চমকপ্রদ  ভাবে) বর্ণনা করতে হয়।

মজবুত ক্রিয়াপদের ব্যবহারে একটিমাত্র বাক্যের মাধ্যমে আপনার বিষয়বস্তুর মূলভাব প্রকাশ করা সম্ভব। কোন গল্প পাওয়ার ক্ষেত্রে একজন মানুষকে কোন না কোন কর্মকান্ডে যুক্ত থাকতে হয়, যেমন কারো দ্বারা একটা সমস্যা মোকাবিলা করা, অন্তর্দৃষ্টি অর্জন করা, সমস্যা চিহ্নিত করা, অথবা কোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়া। এই বিষয়বস্তুগুলো আপনার রচনার শিরোনাম হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। এইদিক দিয়ে উপসম্পাদকীয় প্রবন্ধের খুব কাছাকাছি, কিন্তু এর মূল উদ্দেশ্য হল  সমাজে কি কি সমস্যা আছে এবং কিভাবে এগুলো ঠিক করা যায় সেগুলো তুলে ধরা। 

 আপনি যখন জানবেন কী লিখবেন আর কাদের জন্য লিখবেন, তখনোই লেখাটা সহজ হয়ে যাবে। 

একটি ভালো নিবন্ধ লেখা কতগুলো মূল বিষয়ের উপর নির্ভর করে। 

আমার একজন সহকর্মী মনে করেন লেখালেখির ধরণ অনেকটা জাজ মিউজিকের মতো, যেখানে নতুনত্ব আনতে হয় শুধুমাত্র কিছু প্রমাণ মানদন্ড অনুসরন করে। মূল বিষয়গুলো আয়ত্ত না করা পর্যন্ত বাজে এবং দূর্বোধ্য বিষয়গুলো থেকে বেঁচে থাকার জন্য কিছু সোজাসাপ্টা নীতি অবলম্বন করাই শ্রেয়। 

লেখা যাতে ভালো হয় সেজন্য সংগীতের বিষয়বস্তুর সাথে মিল রেখে আমি সাতটি প্রস্তাব উপস্থাপন করছি। 

প্রথমতঃ সূচনাঃ

এই অনুচ্ছেদটিই আপনার প্রবন্ধকে প্রথম উপস্থাপন করে। একে অবশ্যই পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে। আপনি একটি কাহিনী, একটি গল্প অথবা একটি চমকপ্রদ ঘটনা তুলে ধরতে পারেন। লেখার সাথে সম্পর্কিত একটি বিশেষ স্থান ও সময়ের অনুভূতি পাঠককে দেয়ার জন্য লেখায় কিছু ইমেজ নির্মাণ করুন। 

প্রায়শই ব্যবহৃত হয় এমন ক্লিশে দৃশ্যের উপর নির্ভর করার লোভ সামলান। শৈল্পিক গুণসম্পন্ন এবং আকর্ষণীয় কিছু লিখে শুরু করুন। 

দ্বিতীয়ত, একটি মূল অনুচ্ছেদঃ

এই বিভাগটি আপনার বিষয়বস্তুকে একটি মূলবিন্দুতে ধারণ করে। আপনার শিরোনাম যেটা ধারণ করবে, এই অনুচ্ছেদটি সাধারণত সেইসব মূলভাব পুনরাবৃত্তি করবে, কিন্তু সেটা হবে কিছুটা বিস্তারিত ভাবে। সংক্ষেপে পুরো বিষয়টির উল্লেখ থাকে এমন একটা অনুচ্ছেদ পাঠকদের জন্য খুবই উপকারী। এটি একটি নির্দেশনার মত, যা কিনা সামনে কী হবে সেটা জানায়, সেই সাথে পাঠকের আস্থা এবং প্রত্যাশার বোধকে প্রশ্রয় দেয়,

যেটা আপনার লেখার পরবর্তী হাজার হাজার শব্দ পড়তেও পাঠকদের উৎসাহিত করে। 

যে অংশের মাধ্যমে অনুচ্ছেদের মূলভাব প্রকাশ করা হয়, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু মাঝে মাঝে তা বুঝাটা অনেকের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। আপনি যদি এই অংশটা ভালোভাবে লিখতে পারেন, তাহলে বাকিটাও আপনাআপনি সোজা হয়ে যাবে। (এই লেখার মূলভাব প্রকাশকারী সংক্ষিপ্ত অনুচ্ছেদটা আছে চার নম্বরে)

পুরো বিষয়টি সংক্ষিপ্ত ভাবে উল্লেখ থাকবে যে অনুচ্ছেদে, তার মধ্যে অথবা তার কাছাকাছি মূল ঘটনাটি লেখতে ভুলবেন না।  মূল ঘটনা বলতে বর্তমান দুনিয়ায় চলা এমন কোনো বাস্তব ঘটনার কথা বলা হচ্ছে, যার উপর লেখাটির বিষয়বস্তু দাঁড়িয়ে থাকে৷ আপনার লেখাটি কি বর্তমান দুনিয়ায় চলমান কোন ঘটনার সাথে সম্পর্কিত?  যেমন ব্ল্যাক লিভস মেটার,  কোন পলিসির পরিবর্তন, কোনো নতুন প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ,জাদুঘরের বিষয় অথবা কোনো মহামারি? এটা কি হ্যালোইন অথবা ঋতুভিত্তিক? কেন আপনার এই লেখাটা পড়া উচিত?

তৃতীয়ত, আপনি কে?

আপনার পাঠকদের এটা জানানো উচিত যে, আপনি কিসে দক্ষ , নিজেকে  দক্ষ করে তোলার জন্য আপনি কি কি পদক্ষেপ নিয়েছেন, আর কেনোই বা তাদের উচিৎ আপনার দৃষ্টিভঙ্গির উপর ভরসা রাখা। 

বায়োর মাধ্যমেই পাঠকেরা আপনি কোন বিষয়ের নৃবিজ্ঞানী, কোন বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠান থেকে দক্ষতা অর্জন করেছেন ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পারে । এই অনুচ্ছেদে সরাসরি আপনার যোগ্যতাগুলো উল্লেখ করতে হবে, উদাহরণস্বরূপ- কোনো একটা গোষ্ঠীর মানুষের সাথে কত সময় ধরে ছিলেন, অথবা কোনো সমস্যায় জর্জরিত শত শত মানুষের জরিপ কিভাবে করেছেন ইত্যাদি। কখনো কখনো নিজস্ব ব্যক্তিগত বিবরণ, যেমনঃ আপনার পরিচয়, আপনার জাতীয়তা, আপনার বাসস্থান, আপনার জীবনের অভিজ্ঞতা ইত্যাদি আপনার লেখায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ( কিভাবে আমি আমার দক্ষতাগুলো উল্লেখ করেছি, তা দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ থেকে দেখে নিতে পারেন।) 

চতুর্থত, পটভূমি এবং প্রসঙ্গঃ 

প্রবন্ধের সূচনা সঠিকভাবে করার পর, প্রবন্ধ লেখার গতি কিছুটা কমিয়ে দেওয়া যেতে পারে। আপনি যে স্থান সম্পর্কে লিখছেন, সেখানকার অবস্থা, অবস্থান, অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি অথবা জনসমাজ ইত্যাদি সম্পর্কে পাঠকদের আরো কিছু জানাতে পারেন। তাদের ইতিহাস কী ছিলো? কিভাবে জিনিসগুলো এই পর্যন্ত আসলো? এই ঘটনা, স্থান বা প্রাপ্ত তথ্য কেন বাইরের পৃথিবীতে প্রাসঙ্গিক? কেনো এগুলো গুরুত্বপূর্ণ আর কেনো আপনি ব্যক্তিগতভাবে এর প্রতি আগ্রহী? 

এই ব্যাপারগুলো বেশি ঘুরিয়ে না লিখলেও চলবে, প্রতিটা অনুচ্ছেদে মূলভাব উল্লেখ করা থাকতে হবে। এটা প্রবন্ধ, কোনো বই নয়, কাজেই সহজ রাখতে হবে। 

পঞ্চমত, বর্ণনাঃ 

আপনার পয়েন্ট গুলোকে বিস্তৃত করতে হবে, নিজের লেখাকে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য ওইখানকার বর্ণনা, ঘটনা, উপাখ্যান ইত্যাদি উল্লেখ করে কাহিনী লেখা শুরু করা উচিত। সাক্ষাত্কার নিয়েছেন এমন ব্যক্তিদের উক্তি অথবা চিকিৎসাবিষয়ক নৃবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে কিছু পরিসংখ্যানও আপনি উল্লেখ করতে পারেন। এই বর্ণনাগুলো আপনার প্রবন্ধের মুখ্য অংশ হিসেবে কাজ করবে। আপনি পাঠকের সামনে কী তুলে ধরতে চাইছেন সে সম্পর্কে ধারণা দিবে। 

নিজের দৃষ্টিভঙ্গির সত্যতার প্রমাণস্বরূপ ওইখানকার ঘটনা এবং শক্ত প্রমান দেখানোর জন্য কিছু লিংক যুক্ত করে দিতে পারেন ( উদাহরণ স্বরূপ, নিজের বা অন্যের ছাপানো গবেষণাপত্র)। নিজের পয়েন্টটা ভালো করে বুঝাতে ফাঁকে ফাঁকে ছোট বাক্য ব্যবহার করা যেতে পারে।  

ষষ্ঠত,  বিরোধী মতামতঃ

যদি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি বিতর্কের সূত্রপাত ঘটায়, তাহলে এটা মেনে নিতে হবে। পাঠকদের জানা উচিৎ কাদের সাথে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি মিলছে না এবং কেনো, আর আপনার পাল্টা যুক্তিগুলো কী। 

এই দিকগুলো পাঠকদের মধ্যে আপনার প্রতি বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করবে। অধিকাংশ পাঠকের সাথে যদি আপনার যুক্তি না মিলে তাহলে সেটাও মেনে নেয়া শিখতে হবে। পাঠকের প্রতিক্রিয়াগুলো পূর্বানুমান করে সহজভাবে মেনে নিতে হবে। 

সপ্তমত, উপসংহারঃ 

নিজের দেওয়া যুক্তি আর তথ্যগুলো আরেকবার পর্যালোচনা করতে হবে, সেগুলো অল্পকিছু কথায় পুনরায় উপস্থাপন করতে হবে, অথবা আর কোন কোন জিনিস যোগ করা যেতে পারে, সেগুলি অনুসন্ধান করা (কিন্তু এটা বলা যাবে না যে, আরো গবেষণার প্রয়োজন। যদিওবা আরো নিখুঁত ধারণা পাওয়ার জন্য গবেষণার অবশ্যই প্রয়োজন হয়) যেতে পারে। তবে, পাঠকদেরকে মধ্যে দ্বিধাদন্দ্ব তৈরি না করে পড়ার আনন্দটা উপভোগ করতে দেয়া উচিৎ। 

এক কথায়, প্রবন্ধের মাধ্যমে পাঠককে বোঝানো উচিৎ, ‘লেখকের চোখ দিয়ে বিশ্বকে দেখা এবং নতুন কিছুর রস আস্বাদন করা’। আপনার লক্ষ্য থাকবে পরিষ্কার ভাষা আর আকর্ষণীয় উপায়ে বিষয়গুলা তুলে ধরা। 

একজন সম্পাদক হিসেবে প্রধান কাজ হচ্ছে মূলকথাগুলো যতটা সম্ভব সহজ ভাষা এবং জোরালোভাবে প্রকাশ করা যাতে করে কাহিনী বা গল্পকে আরো জীবন্ত করে উপস্থাপন করা যায়। আপনার সম্পাদকের কাজ আপনার লেখার ধারণাগুলো কেটে দেওয়া কিংবা আপনার লেখাকে আপনার কম্ফোর্ট জোনের বাইরে নিয়ে যাওয়া নয়, তেমনি আপনি যা বলতে চেয়েছেন সেই বলাটাকে অব্যক্ত রাখা কিংবা আপনার স্বরটাই আর বুঝা যায় না, এমন কোনো কাজই আপনার সম্পাদক করবে না। এমনটি হলে আপনাকে অবশ্যই প্রতিবাদ করতে হবে।

খেয়াল রাখতে হবে, যদি আপনার সম্পাদক আপনার  লেখাগুলোর সম্পাদনাতে ভুল করে তাহলে পাঠকসমাজও আপনাকে ভুল বুঝবে। যদি আপনার সম্পাদক কোনো ক্ষেত্রে আপনার ভুল খুঁজে পায়, তাহলে আপনার পাঠকও ভুল বুঝবে। সম্পাদক আপনার ভুলত্রুটি গুলো ধরিয়ে দিবে ঠিকই, কিন্তু ওইগুলোর সমাধান আপনাকেই করতে হবে। 

আমার উল্লেখ করা দিকগুলো ছাড়াও ভালোভাবে লেখালেখি করার জন্য আরো অনেক অনেক দিক রয়েছে। আগ্রহী লেখকগণ এক্ষেত্রে চমৎকার উপদেশ সমৃদ্ধ একটি ছোট বই পড়ে নিতে পারেন, ‘The Science Writers’ Essay Handbook: How to Craft Compelling True Stories in Any Medium.’  

নৃবৈজ্ঞানিক লেখালেখির ক্ষেত্রে কিছু কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে, যেমনঃ আপনার তথ্যের উৎসের প্রতি সৎ থাকা এবং নিরাপত্তার জায়গাটি সমুন্নত রাখা এবং কোন বিষয় নিয়ে আগে লেখা প্রকাশ করলেও আবার লেখার সময় তার খাটিত্ব বজায় রাখা। আপনার সম্পাদকরা আপনাকে এই সমস্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহায়তা করতে পারে।    

সাধারণ পাঠকদের জন্য কিছু লেখা অনেক সুফল বয়ে আনে। এটি বিভিন্ন পৃষ্ঠপোষক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনদের বোঝাতে সহায়তা করে যে আপনার আগ্রহের ক্ষেত্রটি গুরুত্বপূর্ণ। তার পাশাপাশি এটি  আপনার প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি মজবুত করতে সাহায্য করতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এই ধরণের লেখালেখি আপনার নিজের লেখাকে শক্তিশালী করতে এবং আপনার ধারণাগুলি নিজের কাছে পরিষ্কার করতে সহায়তা করতে পারে,  আপনার সিদ্ধান্তকে পোক্ত করে তুলতে পারে বা পরবর্তীতে আরো গবেষণার জন্য উৎসাহ জাগ্রত করতে পারে। আপনার প্রচলিত পাঠক আর কম্ফোর্ট জোন থেকে বাইরে গিয়ে এই ধরণের লেখা আপনার দৃষ্টিভঙ্গির সীমানাকে প্রশস্ত করে তুলে।   

সর্বসাধারণের জন্য লেখালেখি আপনার গুরুত্বপূর্ণ ধারণাগুলিকে পুরো বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে এবং এমনকি বিশ্বকে আরো উন্নত করতে সহায়তা করতে পারে। 

মূল লেখা