নৃবিজ্ঞানের গবেষণা পদ্ধতিঃ অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণ
[নৃবিজ্ঞানের গবেষণা পদ্ধতির সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ দিকের একটি, অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণ নিয়ে লিখেছেন মেহেনতাবিন আহম্মেদ]
নৃবিজ্ঞান বলতে আমরা মূলত মানুষ সম্পর্কিত বিজ্ঞানকে বুঝি, অর্থাৎ মানুষের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা, উৎপত্তি, বিবর্তন, সমাজ-সংস্কৃতি, মানব সমাজের সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য প্রভৃতি বিষয় নিয়ে যে শাস্ত্র অধ্যয়ন করে তাকে নৃবিজ্ঞান বলা হয়। এককথায় বলতে গেলে, স্থান-কাল-পাত্রভেদে মানুষ সম্পর্কিত অধ্যয়নই হলো নৃবিজ্ঞান।
সেরেনা নন্দা তার ‘Cultural Anthropology’ গ্রন্থে নৃবিজ্ঞানকে “মানব সমাজ ও সংস্কৃতির তুলনামূলক অধ্যয়ন” হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছেন।
বেশিরভাগ জ্ঞানকান্ডের মত নৃবিজ্ঞানেরও কিছু মৌলিক গবেষণা পদ্ধতি রয়েছে।
সামাজিক-সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের গবেষণা পদ্ধতির মধ্যে এথনোগ্রাফিক মাঠকর্ম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বৃটিশ নৃবিজ্ঞানী ব্রনিস্ল ম্যালিনস্কি তাঁর “Argonauts of the Western Pacific” গ্রন্থে নৃবৈজ্ঞানিক মাঠকর্মের একটি মানদন্ড তৈরি করেন। তিনি যে পদ্ধতির কথা উল্লেখ করেন তার অন্যতম বিষয় হলো অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণ (Participant Observation)। ম্যালিনস্কির পর থেকেই অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণ সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের একটি কেন্দ্রীয় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে । এটা মূলত একটি তথ্য সংগ্রহের একটি পদ্ধতি যা সাধারণত গুণগত গবেষণায় ব্যবহৃত হয়। এই পদ্ধতিতে গবেষক সংস্কৃতিকে পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করে, স্থানীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সংস্কৃতি ও সেই সম্পর্কিত ধারনাসমূহকে বোঝার চেষ্টা করে।
অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণ হলো মূলত কোনো সংস্কৃতিকে পাঠ করার লক্ষ্যে গবেষিত জনগোষ্ঠীর মাঝে দীর্ঘ সময় অবস্থান করে, তাদের ভাষা শিখে, তাদের সাথে মিশে, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এমিক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে সংস্কৃতিকে বোঝার চেষ্টা করা ও তথ্য সংগ্রহ করার পদ্ধতি।
মাঠকর্মে গবেষকদের ভূমিকাঃ
মাঠকর্মের ক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারী পর্যবেক্ষকদের মূলত দুই ধরনের ভূমিকায় কাজ করতে লক্ষ্য করা যায়।
(১)অংশগ্রহণকারী পর্যবেক্ষক
(২) পর্যবেক্ষণকারী অংশগ্রাহক
কোন গবেষক গবেষিত জনগোষ্ঠীর আউটসাইডার হতে পারে, যিনি ওই সংস্কৃতিতে অবস্থান করে, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করে এবং আশেপাশের মানুষের কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ করেন। সেক্ষেত্রে ওই গবেষক হবেন অংশগ্রহণকারী পর্যবেক্ষক (Participating observer)। অপরদিকে, গবেষক হতে পারেন ইনসাইডার কেউ, যিনি তার পারিপার্শ্বিক জীবনাচরণের বিভিন্ন বিষয় পর্যবেক্ষণ ও রেকর্ড করেন ; এক্ষেত্রে তিনি হবেন পর্যবেক্ষণকারী অংশগ্রাহক (Observing Participant)।
অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তাঃ
সংস্কৃতির অধ্যায়নে অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণের গুরুত্ব বোঝার জন্য আমরা কমপক্ষে পাঁচটি কারণ উল্লেখ করতে পারি।
(১) অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণ সব ধরনের ডেটা/ তথ্য সংগ্রহে সহায়ক। অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতির দৌলতে একজন গবেষক কোন সংস্কৃতির একান্ত নিজস্ব স্পর্শকাতর চর্চাসমূহতে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। যেমন বিবাহ সম্পর্কিত বিশেষ রীতিনীতি, সন্তান-প্রসব, শেষকৃত্য ইত্যাদি।
(২) এই পদ্ধতি প্রতিক্রিয়াশীলতা (Reactivity) জনিত সমস্যা হ্রাস করে। মানুষ যখন জানতে পারে যে তারা গবেষণাধীন, তখন তাদের ব্যবহারে পরিবর্তন আসতে পারে। অন্যদিকে অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে একজন গবেষক দীর্ঘদিন একটি সংস্কৃতিতে বসবাস করেন এবং তিনি উক্ত সমাজের মানুষের সাথে খোলামেলাভাবে পরিচিত হয়ে যান। যার কারণে গবেষক যখন তাদের বিশেষ আগ্রহের স্থান থেকে সরে আসবে, তখন তারা গবেষকের উপস্থিতিতেও দৈনন্দিন কার্যাবলী স্বাভাবিকভাবে চালিয়ে যাবে। যা যথার্থ তথ্য সংগ্রহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
(৩) অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণ গবেষককে নেটিভ /স্থানীয় ভাষায় যথাযথ প্রশ্ন করতে সাহায্য করে। নৃবিজ্ঞানের যেকোনো গবেষণার জন্যই স্থানীয় ভাষা খুবই গুরত্বপূর্ণ। কেননা, ভাষার মাধ্যমেই মানুষের সংস্কৃতির সবচেয়ে গভীর ব্যাপারগুলো প্রকাশিত হয়। কোন একজন নৃবিজ্ঞানীর যদি তার গবেষিত অঞ্চলের স্থানীয় ভাষা না জানেন, তবে অবধারিতভাবেই তিনি অনেক তথ্য যথার্থভাবে বুঝতে ও ব্যাখ্যা করতে পারবেন না। যেমন ধরা যাক, সাঁওতালদের ভাষায় অনেক প্রবাদের প্রচলন আছে, কেউ যদি সেই ভাষা না জানেন, তবে প্রবাদগুলোর সাথে সাঁওতালদের সাংস্কৃতিক কাঠামোর সম্পর্কটি তিনি ধরতে পারবেন না।
যেহেতু অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণে সবসময় স্থানীয় ভাষার উপর গুরত্ব দেওয়া হয়, এইজন্য এটি ভালো উপাত্ত সংগ্রহ ও ব্যাখ্যার ক্ষেত্রেও একটু সেতু হিসেবে কাজ করে।
(৪) অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণ কোন সংস্কৃতিতে কি চলছে সে সম্পর্কিত স্বজ্ঞাত বোঝাপড়ায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে, এবং প্রাপ্ত উপাত্তের অর্থ বুঝতে সাহায্য করে।
(৫) গবেষণার সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সমস্যা এ পদ্ধতির মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। যেমন কেউ যদি কোন গ্রাম্য সালিশ পর্যবেক্ষণ করতে যায়, একজন আগন্তুক হিসেবে তার খুব বেশি তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। কিংবা কখনো কখনো কোন স্পর্শকাতর ঘটনায় একজন আগন্তুকের প্রবেশাধিকার থাকে না। কিন্তু যখন একজন গবেষক সেই সমাজে পরিচিত ব্যক্তি হয়ে যান, তিনি বেশ সহজেই উক্ত কার্যক্রমগুলোতে প্রবেশাধিকার পেয়ে যেতে পারেন।
মাঠে প্রবেশ
অংশগ্রহণমূলক মাঠকর্ম সম্পাদনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হল মাঠে প্রবেশ করা।
এক্ষেত্রে ৫ টি নিয়ম অনুসরণ করা যায়।
১) অপেক্ষাকৃত সহজে প্রবেশাধিকার পাওয়া যাবে এমন ক্ষেত্র নির্বাচন করা।
২) গবেষক ও গবেষণার সাথে জড়িত পর্যাপ্ত লিখিত নথিপত্র নিয়ে ফিল্ডে যেতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি ফর্মাল ডকুমেন্ট, যেখানে গবেষকের পরিচয়, গবেষণার উদ্দেশ্য, অর্থায়ন, অবস্থানকাল উল্লেখ করা থাকবে এবং সেটি অবশ্যই স্থানীয় ভাষায় লেখা ও উচ্চপদস্থ প্রশাসন কর্তৃক স্বাক্ষরিত হতে হবে।
৩) মাঠে প্রবেশের ক্ষেত্রে গবেষকরা নিজস্ব কৌশল ব্যবহার করে থাকে। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পরিচিতি মাঠে প্রবেশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। স্থানীয় মানুষ গবেষককে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন করলে; যেমন গবেষকের পরিচয়, উদ্দেশ্য,অর্থায়ন,গবেষণার ডেটা দিয়ে কি করবে প্রভৃতি প্রশ্নের উত্তরে গবেষক কি বলবে সেটা আগে থেকেই নির্ধারণ করে রাখতে হবে।
৪) গবেষিত স্থানের ফিজিকাল এবং সোশ্যাল লেআউট সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবে। যেমন একটি গবেষিত অঞ্চলের মানচিত্র, সেখানে জনসংখ্যা ও বসতির বিন্যাস, তাদের সমাজব্যবস্থা- এসব সম্পর্কে আগে থেকেই প্রাথমিক ধারণা লাভ করা।
অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষকের দক্ষতা:
অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে একজন গবেষক তথ্য সংগ্রহের হাতিয়ার হয়ে ওঠে এবং নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে তথ্য বিশ্লেষণ করার সক্ষমতা অর্জন করে। দক্ষতা অর্জনের প্রধান স্থান হলো মাঠ তবে, মাঠে প্রবেশের পূর্বেও একজন গবেষকের কয়েকটি স্কিল ডেভেলপ করা প্রয়োজন।
স্থানীয় ভাষা শেখা (Learning Native Language): কোন জনগোষ্ঠীকে অধ্যায়ন করতে হলে তাদের ভাষা সম্পর্কিত জ্ঞান এবং ব্যবহারের পারদর্শিতা থাকা আবশ্যক। নতুবা তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।
স্পষ্ট সচেতনতা তৈরি (Building Explicit Awareness): অংশগ্রহণকারী পর্যবেক্ষকের অন্য আরেকটি দক্ষতার হল, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় সম্পর্কিত স্পষ্ট সচেতনতা অবলম্বন করা।
স্মৃতিশক্তি উন্নত করা (Building Memory): আমরা পারিপার্শিক বিষয় বা ঘটনা সম্বন্ধে পূর্ণ সচেতন থাকলেও সেগুলো আমাদের দীর্ঘ সময় মনে থাকবে, এর কোনো নিশ্চয়তা নাই। তাই একটি যথাযথ অংশগ্রহণকারী পর্যবেক্ষণের জন্য উন্নত স্মৃতিশক্তি গড়ে তোলা প্রয়োজনীয়।
নবিশ হিসেবে কাজ করা (Maintaining Naivete`: ‘Novice’): অর্থাৎ এমন কেউ যে আসলেই নতুন সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী, সেরকম হওয়ার চেষ্টা করা।
লেখার দক্ষতা গড়ে তোলা (Building Writing skills): একজন অংশগ্রহণকারী পর্যবেক্ষক হিসেবে গুছিয়ে ও স্পষ্ট ভাবে লেখার দক্ষতা অর্জন করা আবশ্যক। মাঠে প্রবেশের পূর্বে দৈনিক লেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে যা পরবর্তীতে ফিল্ডনোট ও পাবলিকেশনের লেখালেখিতে কাজে দিবে।
খোলামেলা যোগাযোগে সক্ষম হওয়া (Hanging Out, Gaining Rapport) : ফিল্ডে গিয়ে স্থানীয় মানুষদের সাথে ঘোরাফেরা করাও গবেষণার একটি অংশ। যখন গবেষক স্থানীয় জনগোষ্ঠীর আস্থা অর্জনে ও তাদের সাথে ‘সুসম্পর্ক ও সহজতা ‘ গড়ে তুলতে সক্ষম হবে তখনই বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে সরাসরি প্রশ্ন করার সুযোগ তৈরি হয়।
নৈর্ব্যক্তিকতা (Objectivity) : নৈর্ব্যক্তিকতা স্থানীয় ভাষায় দক্ষতার মতোই আরেকটি গুন। এথনোগ্রাফির নৈর্ব্যক্তিকতা বলতে কোন পক্ষপাতিত্ব ছাড়া গবেষিত সংস্কৃতিকে উপস্থাপন করা বুঝায়। তবে মানুষ কখনোই পুরোপুরি নৈর্ব্যাক্তিক হতে পারে না। আমাদের নিজস্ব বোঝাপড়া কিংবা সংস্কৃতি বেশিরভাগ সময় আমাদের উপস্থাপনেও প্রভাব ফেলে। তবে গবেষণার ক্ষেত্রে আমরা নিজস্ব মতামত কিংবা দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আরো সচেতন হয়ে উঠতে পারি। আমরা নিজেকে প্রশ্ন করতে পারি, আমরা যা দেখেছি সেটাই কি উপস্থাপন করেছি? নাকি যা দেখতে চেয়েছি, সেটি উপস্থাপন করেছি?
অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণের ধাপসমূহঃ
প্রাথমিক যোগাযোগ (Initial contact) : মাঠকর্মে যাওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় গবেষকদের মাঝেই নতুন সংস্কৃতিতে যেয়ে থাকা, ফিল্ডওয়ার্ক করা ইত্যাদি নিয়ে উৎসাহ কাজ করে।
সাংস্কৃতিক অভিঘাত (Cultural Shock) :প্রাথমিক পর্যায়ে ভালো অভিজ্ঞতা হলেও অনেকেরই কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ডিপ্রেশন বা কালচারাল শক দেখা দেয়। একজন ব্যক্তি যখন নিজস্ব সংস্কৃতির পরিমন্ডল থেকে ভিন্ন আরেকটি সংস্কৃতির পরিমন্ডলে প্রবেশ করে তখন সাংস্কৃতিক অভিঘাতের ঘটনাটি খুবই স্বাভাবিক। যার ফলে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়। ভাষাগত সমস্যা, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে পরিবর্তন, পরিষ্কার শৌচাগারের অভাব, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন- এসবকিছুর পরিবর্তন মিলিয়ে একটি কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
প্রকৃত তথ্য সংগ্রহ করা (Discovering the Obvious): অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণের পরবর্তী ধাপে গবেষক একটি সিস্টেমেটিক বেসিসে ডেটা কালেকশন করতে থাকে। এ পর্যায়ে গবেষক ভাবতে শুরু করে যে এইবার হয়তো সে প্রকৃত তথ্যগুলো পেতে শুরু করেছে। এটা তারমধ্যে উৎসাহও তৈরি করে।
বিরতি (The Break): গবেষক এবং তথ্যদাতা সকলেরই প্রয়োজন হয় বিরতি বা বিশ্রামের। মাঠকর্মের তিন থেকে চার মাস পরে সাধারণত এই বিরতির সময় এটা আসে, যেটা দীর্ঘমেয়াদি মাঠকর্ম সম্পাদনকারী গবেষকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে গবেষক মানসিক ও শারীরিকভাবে মাঠ থেকে দূরত্ব স্থাপন করতে পারেন এবং গবেষণার কাজে সে কতটুকু পেয়েছে এবং অবশিষ্ট সময় আর কি কি তথ্য সংগ্রহ করতে চায় ইত্যাদি নির্ধারণ করার সুযোগ পায়। এমনকি স্থানীয় ও জাতীয় পরিসংখ্যান সংক্রান্ত ডাটা সংগ্রহ করে কেউ এ সময়টা কাজে লাগাতে পারে।
পুনরায় ফোকাস করা (Focusing) : বিরতি নেওয়ার পর ফিল্ডে ফিরে এসে গবেষক নতুন করে কাজ শুরু করার উৎসাহ পায়। কোন ধরনের তথ্য সংগ্রহ করা বাকি, গবেষণার জন্য ডিজাইনড স্টেটমেন্টে কি কি পরিবর্তন করা লাগবে ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট হয়। এ পর্যায়ে করণীয় মূলত মাঠকর্মে মনোনিবেশ করা ও সময়ের যথাযথ ব্যবহার করা।
অবসাদ এবং দ্বিতীয় বিরতি (Exhaustion, The seceond Break) : কখনো কখনো দীর্ঘদিন মাঠকর্ম করার পরে গবেষক অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারেন। একইসাথে গবেষকও ভাবতে শুরু করেন তিনি হয়তো তার নিজের তথ্যদাতাদের বিরক্ত করছেন। এই সময় গবেষকের মনে হতে পারে, তার তথ্যদাতাদের থেকে হয়তো আর নতুন তথ্য পাওয়ার নেই। যদিও এই ব্যাপারটি সঠিক নয়। একটি নির্দিষ্ট সংস্কৃতি সম্পর্কে তথ্যের কোন সীমা থাকে না।
যাই হোক, এই ধরনের পরিস্থিতিতে একটি বিরতি নেওয়াই সবচেয়ে ভালো আইডিয়া। এই বিরতির সময়টিতে গবেষক তার নিজের গবেষণাটিকে পুনরায় পর্যালোচনা করার সুযোগ পান।
মাঠ থেকে বিদায় গ্রহণ (Leaving the Field): অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণের সর্বশেষ ধাপ হলো মাঠ থেকে বিদায় গ্রহণ করা। মাঠ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় অবশ্যই তথ্যদাতাদের নিকট তাদের অবদান স্বীকার করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। একইসাথে তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে যাওয়া উচিত। এর ফলে পরবর্তীতে উক্ত স্থানে মাঠকর্ম সম্পাদন করার প্রয়োজন হলে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উৎসাহের সাথে গবেষণা কাজে সাহায্য করবে।
নৃবিজ্ঞানে অংশ্রগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণ সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ প্রত্যয়ের মধ্যে একটি। যদিও পরবর্তীতে বিভিন্ন তাত্ত্বিক দ্বারা এই পদ্ধতির নানা সংকট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবুও বলা যায়, এই পদ্ধতিই নৃবিজ্ঞানকে অন্যান্য বিষয় থেকে স্বতন্ত্র করে তুলেছে।
Reference:
Research methods in anthropology, H. Russel Bernard