নৃবিজ্ঞানে রাজনৈতিক সংগঠনের প্রাথমিক ধারণা

[নৃবিজ্ঞানে রাজনৈতিক সংগঠনের ধারণা নিয়ে লিখেছেন সাদিকা তাবাসসুম সুপ্তি]

নৃবিজ্ঞান এমন একটি শাস্ত্র যেখানে মানুষকে সামগ্রিকভাবে অধ্যয়ন করা হয়। সামগ্রিকভাবে অধ্যয়ন করতে গিয়ে মানুষের জৈবিক ও সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন মুখ্য হয়ে উঠে। আর সংস্কৃতির অন্যতম অংশ হলো রাজনৈতিক সংগঠন। যেমন- বাংলাদেশের সংস্কৃতি বুঝতে হলে এটিও বুঝতে হবে যে, বাংলাদেশের মানুষেরা কিভাবে পরিচালিত হচ্ছে, কিভাবে পুরো দেশকে কোন নির্দিষ্ট  নিয়ম ও শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে রাখার চেষ্টা করা হয়, কেন সমাজের একজন সদস্য ইচ্ছা করলেই আরেকজন সদস্যের সম্পত্তি ভোগ করতে পারছে না, কে বা কারা কিসের ক্ষমতায় এতোগুলো মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করছে ইত্যাদি। তাই মানুষকে অধ্যয়ন করতে গিয়ে নৃবিজ্ঞানীদের ভাবনা ও কাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হয়ে উঠলো বিভিন্ন সমাজের রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক সংগঠন।

রাজনৈতিক সংগঠন সাধারণত ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের ধারণা দেয়। সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে সমাজের সদস্যদের কর্ম ও আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা হয়, সামাজিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিরসন করা হয় ও সামাজিক শৃঙখলা বজায় রাখা হয়। রাজনৈতিক সংগঠনকে কেন্দ্র করে সমাজে যেসব কাজ পরিচালিত হয় সেগুলো হলো – সামাজিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, নেতৃত্ব প্রদান, গোষ্ঠীর অধিকার সংরক্ষণ, বহিঃশত্রুর আক্রমণের আশঙ্কা থেকে মুক্ত থাকা, সমাজের সদস্যদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ, দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিরসন, শৃঙখলা বজায় রাখা এবং খাদ্য-সম্পদ বিতরণ করা ইত্যাদি। নৃবিজ্ঞানীদের মতে, সকল সমাজেই রাজনৈতিক সংগঠন পরিলক্ষিত হয়; তবে এর বিশেষীকরণের মাত্রা এবং আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া এক সমাজ থেকে অন্য সমাজে ভিন্ন হতে পারে। এই পর্যায়ে আমরা সমাজভেদে বিভিন্ন রকম রাজনৈতিক সংগঠন ও সেগুলোর কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করব।

রাজনৈতিক সংগঠন নিয়ে আলাপ করার ক্ষেত্রে নৃবিজ্ঞানীরা ‘টাইপোলজিক্যাল সিস্টেম’ অর্থাৎ শ্রেণীকরণ পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন। ১৯৪০ সালে নৃবিজ্ঞানী ই.ই. ইভান্স প্রিচার্ডমেয়ার ফোর্টেস তাদের  “African Poltical Systems” বইয়ে মোটা দাগে দুই ধরনের রাজনৈতিক সংগঠনের কথা বলেছেন:

১. কেন্দ্রীভূত রাজনৈতিক সংগঠন (Centralised political organization) –  যেখানে রাজনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকে নির্দিষ্ট ব্যক্তি ও ব্যক্তিবর্গের মধ্যে। সেসব সমাজে সদস্যদের মাঝে ক্ষমতার বৈষম্য ও সম্পদের উপর অসমান অধিকার উপস্থিত। যেমন- রাষ্ট্রব্যবস্থা (State system) ও চিফডম।

২. বিকেন্দ্রীভূত রাজনৈতিক সংগঠন (Decentralised political organization) – যেখানে রাজনৈতিক ক্ষমতা নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তিবর্গের মধ্যে কেন্দ্রীভূত থাকে না বরং সকলেই প্রায়  সমান অধিকার ও সুযোগ পায়। এই সমাজগুলোতে সাধারণত বৈষম্য অনুপস্থিত। যেমন- ব্যান্ড ও ট্রাইব সমাজ।

১৯৬২ সালে নৃবিজ্ঞানী এলমান সার্ভিস রাজনৈতিক সংগঠনের অন্য একটি শ্রেণীকরণ প্রস্তাব করেন। গোষ্ঠীর আকার, খাবার সংগ্রহের উপায়, টিকে থাকার মাধ্যম, নেতা নির্বাচন, নেতৃত্ব প্রদান, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া এবং সদস্যদের উপর গোষ্ঠী প্রধানের আধিপত্যের মাত্রার উপর নির্ভর করে এলমান সার্ভিস চার ধরনের রাজনৈতিক সংগঠনের কথা বলেন:

১. ব্যান্ড (Band)

২. ট্রাইব (Tribe)

৩. চিফডম (Chiefdom)

৪. রাষ্ট্র (State)

ব্যান্ডঃ  

ব্যান্ড একটি ছোট গোষ্ঠী যা তুলনামূলক শিথিলভাবে সংগঠিত হয়। টিকে থাকার উদ্দেশ্যে কিছু মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর স্বার্থে ব্যান্ড গঠিত হয়। সাধারণত ২০-৫০ সদস্য নিয়ে এক একটি ব্যান্ড গঠিত হয়।

ব্যান্ডে কোন সিদ্ধান্ত ব্যক্তির একক মতামতে গৃহীত হয়না। সকলের সম্মিলিত মতামতের ভিত্তিতে তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে তারা একজনকে গোষ্ঠী প্রধানের দায়িত্ব দেয় কোন অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য। সেক্ষেত্রে বয়োজ্যেষ্ঠ, শিকারে দক্ষ ও বিচক্ষণ এমন কাউকেই সাধারণত নির্বাচন করা হয়।

ব্যান্ড টিকে থাকে সাধারণত শিকার ও সংগ্রহের মাধ্যমে। তারা ”হান্টার-গ্যাদারার’ হিসেবে পরিচিত। খাবার সংগ্রহের স্বার্থে তারা একত্রে কোন স্থান নির্বাচন করে ও খাবারের মৌসুম অনুযায়ী সেখানে অস্থায়ীভাবে বসবাস করে। ব্যান্ডের সদস্যদের মাঝে সম্পত্তির ব্যক্তিগত মালিকানার তেমন কোন ধারণা নেই। তাদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সংগঠিত হয় পারস্পরিক আদানপ্রদান (Reciprocity) এর মাধ্যমে।

বর্তমান বিশ্বে ব্যান্ড হিসেবে পরিচিত আফ্রিকার জু/হোয়ান্সি, (!)কুং বুশম্যান, কানাডার ইনুইত গোষ্ঠী, স্ক্যান্ডিনেভিয়ার লাপ, অস্ট্রেলিয়ার তিওয়ি এবং জাপানের আইনু গোষ্ঠী।

ট্রাইব

ট্রাইব গোষ্ঠীগুলো সাধারণত পশুপালক ও উদ্যানচাষী হয়ে থাকে। তাদের খাবার যোগানের মাধ্যমকে ‘হর্টিকালচার-প্যাস্টোরাল’ পদ্ধতি বলা হয়। ব্যান্ড সমাজের মতো ট্রাইবও রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে গোষ্ঠীর সদস্যদের মৌলিক চাহিদাগুলোর ওপর জোর দেয় বেশি। তবে তুলনামূলক তারা ব্যান্ডের চাইতে অধিক সংঘবদ্ধ।

ট্রাইব গঠিত হয় সাধারণত একাধিক ব্যান্ড ঐক্যবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে। ট্রাইবে সদস্যের সংখ্যা ৫০-১০০ হয়। তারাও স্থায়ীভাবে দীর্ঘদিন এক জায়গায় বসবাস করে না, তবে আবাসস্থল ব্যান্ডের তুলনায় স্থায়ী৷ পশুপালনের জন্য চারণভূমির খোঁজে ও উদ্যানের জন্য উর্বর মাটির খোঁজে তারা বাসস্থান পরিবর্তন করে থাকে। যদিও তাদের মাঝে ব্যক্তিমালিকানার ধারণা নেই, তবে গোষ্ঠীভিত্তিক পশু মালিকানা এবং জমি মালিকানার ধারণা রয়েছে।

পূর্বসূরি জ্ঞাতি সম্পর্ক অনুযায়ীই ট্রাইবের সদস্যপদ বহাল থাকে। ট্রাইবে রাজনৈতিক নেতা নির্বাচন করা হয় সাধারণত বিশেষ জ্ঞান-গুণের অধিকারী, দক্ষ ও বিচক্ষণ এমন কাউকে। ট্রাইব নেতাদের ক্ষমতা ব্যান্ড নেতার তুলনায় কিছুটা বেশি। তবে ট্রাইব নেতারা অতিরিক্ত পরিমাণে ক্ষমতা চর্চা করতে গেলে সামাজিক উপায়েই তাদের আবার অবাঞ্ছিত করে দেওয়া হয়। এই পদ্ধতি ক্ষমতার অতিকেন্দ্রীকরণ এবং সম্পদের আত্তীকরণকে সীমাবদ্ধ রাখে।

তাদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সংগঠিত হয় ব্যান্ড গোষ্ঠীর মতোই পারস্পরিক আদানপ্রদান (Reciprocity) এর মাধ্যমে।

বর্তমান বিশ্বের উল্লেখযোগ্য ট্রাইব গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে আছে সুদানের নুয়ের, ব্রাজিলের ইয়ানোমামো, আফ্রিকার কেপেলে এবং ডিংকা।

চিফডম 

বিবর্তনবাদী নৃবিজ্ঞানীরা রাষ্ট্রবিহীন ব্যবস্থার মধ্যে ব্যান্ড সমাজের থেকে ট্রাইব সমাজকে উন্নত ভেবেছেন এবং চীফডমকে ভেবেছেন ট্রাইব থেকে উন্নত। সাধারণত ট্রাইবের চেয়ে চিফডমে সদস্য সংখ্যা বেশি হয় এবং ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব এক বা একাধিক ব্যক্তিবর্গের কাছে কেন্দ্রীভূত থাকে।

নৃবিজ্ঞানীদের দ্বারা চিহ্নিত চিফডম সমাজগুলো টিকে থাকে মূলত মাছ ধরা ও কৃষিকাজের উপর ভিত্তি করে। চারণভূমির নিকটে থাকলে তারা পশুচারণও করে। যেমন- উত্তর আমেরিকার উত্তর-পশ্চিম প্যাসিফিক অঞ্চলের চিফডম ব্যবস্থার সমাজগুলোতে পশুশিকার ও পশুপালনই মুখ্য অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে টিকে আছে। এটি সম্ভব হওয়ার পেছনে রয়েছে ভৌগোলিক ও পরিবেশগত কারণ। সেখানকার সমৃদ্ধ পরিবেশের কারণে সহজেই উদ্ভৃত্ত সম্পদ তৈরি হওয়ার ফলে শুধুমাত্র পশুশিকার ও পশুপালনের মাধ্যমেই তারা টিকে থাকতে পারে। বড় কোন দুর্যোগের সম্মুখীন না হলে চিফডমগুলোর আবাসস্থল সাধারণত স্থায়ী হয়।

ব্যান্ড ও ট্রাইবের চেয়ে চিফডমে ক্ষমতার চর্চা অধিক কেন্দ্রীভূত থাকে। চিফডমে আধিপত্য ও বৈষম্যের উপস্থিতি দেখা যায়। সাধারণত চিফ (Chief) অর্থাৎ গোষ্ঠীর প্রধান নির্বাচন করা হয় উচ্চবংশীয় কোন ব্যক্তিকে। কখনো কখনো আবার উত্তরাধিকারসূত্রেও গোষ্ঠীর প্রধান নির্বাচন করা হয়। গোষ্ঠীর কোন সিদ্ধান্তে তার একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার সম্ভব না হলেও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডগুলো চিফকে ঘিরেই পরিচালিত হয়।

চিফডমের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালিত হয় পুনর্বণ্টনের (Redistribution)  মাধ্যমে। চিফডমের সদস্যরা আনুষ্ঠানিকভাবে চিফের নিকট সম্পদ প্রদান করে এবং চিফ সেই সম্পদ সদস্যদের প্রয়োজন অনুযায়ী পুনর্বণ্টন করে। এই পুরো আচারটিতে চিফের কর্তৃত্বই সর্বাধিক। চিফডম ব্যবস্থার সমাজে উদভৃত্ত সম্পদের ভারও থাকে চিফের ওপরে এবং চিফের মাধ্যমেই উদভৃত্ত সম্পদ একীভূতকরণ এবং বণ্টন করা হয়ে থাকে। আবার সামাজিক দ্বন্দ্ব নিরসনেও চিফ বিচারকের ভূমিকা পালন করে থাকে।

চিফডম ব্যবস্থার সমাজের উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায় পাপুয়া নিউ গিনির ট্রব্রিয়ান্ড আইল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডের মাওরি, আফ্রিকার আশান্তে এবং জুলু।

রাষ্ট্র ব্যবস্থা

রাষ্ট্রের সরকার ব্যবস্থা হলো রাজনৈতিক সংগঠনের সবচেয়ে আনুষ্ঠানিক ও সবচেয়ে জটিল রূপ। কৃষিব্যবস্থার আবির্ভাবের সাথে রাষ্ট্রব্যবস্থার সম্পর্ক নিবিড়। বিবর্তনবাদী নৃবিজ্ঞানীদের মতে এটিই ‘সভ্য’ সমাজ ব্যবস্থার নির্ণায়ক। এটি কেন্দ্রীভূত রাজনৈতিক সমাজব্যবস্থা এবং সর্বাপেক্ষা স্থায়ী।

রাষ্ট্র ব্যবস্থা গঠিত হয় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ‘অনুগত’ সদস্যদের নিয়ে। অর্থাৎ, রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ক্ষমতা ও আধিপত্য থাকে কেন্দ্রীভূত। সেই ক্ষমতার বলে সরকার গঠিত হয় যার বিশেষ বিশেষ আমলাতান্ত্রিক দল রাষ্ট্রের বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে তদারকি করে ও জনগনকে শাসন করে। যেমন- আইন প্রণয়ন করে, প্রশাসনিক আর বিচার কার্যাবলী সম্পন্ন করে, বাজেট পাশ করে, জনগণের অধিকার নিশ্চিত করে ও অধিকারের সীমারেখা টানে। শাসক শ্রেণীর একচেটিয়া অধিকারের ফলে বৈষম্য ও শোষণ থাকে তীব্র পর্যায়ে। শ্রেণী বৈষম্য দেখা দেয় যেখানে বঞ্চিত ও শোষিত শ্রেণীর সদস্য সংখ্যা থাকে সর্বাধিক।

রাষ্ট্রের নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবনে প্রায় সকল পর্যায়েই রাষ্ট্রের প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ বিদ্যমান। বিভিন্ন সামাজিক সম্পর্ক, যেমন- বিবাহ থেকে শুরু করে নাগরিকের অধিকার ও দায়িত্বের জায়গাগুলোও রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়। রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ থেকে বাদ যায় না এমনকি জনমানুষের প্রাইভেসিও।

রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তির উপর নির্ভরশীল। প্রথমত, রাষ্ট্র কর্তৃক অনুমোদিত নয় এমন কোনো কাজে জড়িত হলে নাগরিক সেই কাজের ফলস্বরূপ রাষ্ট্র কর্তৃক শাস্তিযোগ্য বলে বিবেচিত হয়। রাষ্ট্রের সরকারগুলি লিখিত আইন তৈরি করে, আমলাতন্ত্রের বিভিন্ন স্তরের মাধ্যমে সেগুলো পরিচালনা করে, এবং পুলিশ বাহিনী ও সেনাবাহিনী মাধ্যমে সেগুলো রাষ্ট্রের নাগরিকের উপর প্রয়োগ করে। অর্থাৎ, রাষ্ট্র নাগরিকের উপর বলপ্রয়োগ ও শারীরিক জবরদস্তির একচেটিয়া অধিকার রাখে। দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্র তার কর্তৃত্ব বজায় রাখে ভাবাদর্শের মাধ্যমে। দীর্ঘমেয়াদি ক্ষমতা বজায় রাখতে গিয়ে রাষ্ট্রের সরকারকে জাতীয়তাবাদী ভাবাদর্শের ডাক দিতে হয় যার মাধ্যমে সরকার সাধারণ নাগরিকের আনুগত্য নিশ্চিত করে। এই আদর্শ তৈরী করতে গিয়ে সরকারকে উদযাপন করতে হয় বিভিন্ন জাতীয় দিবস (যেমন-২৬শে মার্চ), প্রচার করতে হয় জাতীয় কৃতিত্ব (গানে গানে পদ্মা সেতু নির্মাণের সম্প্রচার), নির্মাণ করতে হয় স্থাপত্য ও ভাস্কর্য (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবাস বাংলা ভাস্কর্য), কীর্তন করতে হয় রাষ্ট্রের মুক্তিলাভের আশায় জীবন দেওয়া শহীদদের নাম আর পাশাপাশি দরকার পড়ে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি।

রাষ্ট্রব্যবস্থায় অর্থনৈতিক কর্মকান্ড হলো বাজারকেন্দ্রিক যেখানে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় হয় অর্থের মাধ্যমে ও লাভের আশায়। রাষ্ট্রের অর্থনীতি ব্যক্তিকেন্দ্রিক।

বর্তমান পৃথিবীর অধিকাংশ সমাজব্যবস্থাই রাষ্ট্র ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত। যেমন- বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের প্রায় সকল সমাজ ব্যবস্থা।

সমাজভেদে রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও সংগঠনের ভিন্নতা থাকলেও প্রতিটি রাজনৈতিক সংগঠনের কিছু সাধারণ গুরুত্ব রয়েছে। যেমন- এই সংগঠনগুলো সামাজিক শৃঙ্খলা বজায়ে অবদান রাখে, অধিক সংখ্যক সদস্যের কর্মকান্ডকে নিয়ন্ত্রণ করে, সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে পালনে ভূমিকা রাখে ইত্যাদি। তবে কোন পরিস্থিতিতে, কিসের তাড়নায়, কিভাবে রাজনৈতিক সংগঠনগুলো এক রূপ থেকে আরেক রূপ নিলো, কিংবা কেনই বা ভিন্ন ভিন্ন সমাজে ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক ব্যবস্থা বিরাজমান তা নিয়ে নৃবিজ্ঞানীর মতভেদ রয়েই গেছে। কেন একটি সমাজের মানুষ বৈষম্যহীন, কর্তৃত্বহীন শিকারী সমাজ থেকে একটা সময় কেন্দ্রীভূত ক্ষমতার রাষ্ট্রব্যবস্থায় উপনীত হলো তা নিয়ে চলছে রাজনৈতিক নৃবিজ্ঞানীদের নিরন্তর ব্যাখ্যা ও গবেষণা।

রেফারেন্স 

Cultural Anthropology: An Applied Perspective, 2010, Gary Ferraro & Susan Andreatta

নৃবিজ্ঞান পাঠপরিচয়, মাহফুজ সরকার, শাহারিয়ার জিম