নৃবিজ্ঞানের সাথে উন্নয়নের সম্পর্কের টানাপোড়ন

[এনথ্রোসার্কেলে নৃবিজ্ঞানের সাথে উন্নয়নের সম্পর্ক নিয়ে লিখেছেন সাদিয়া শান্তা।]

“Like an unwanted ghost, or an uninvited relative, ‘development’ haunts the house of anthropology.” (ফার্গুসন, ১৯৯৬)।

নৃবিজ্ঞানী জেমস ফার্গুসনের মতে, “উন্নয়ন” বিষয়টি অনাহূত অতিথির মতো নৃবিজ্ঞানের দরজায় এসে হাজির হয়। এমনকি তিনি “উন্নয়ন” আর “নৃবিজ্ঞান” বিষয় দুটিকে “যময শয়তান” (evil twin) হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ফার্গুসনের আলাপে বোঝাই যাচ্ছে নৃবিজ্ঞান ও উন্নয়নের মাঝে এক ধরনের টানাপোড়নের সম্পর্ক বিদ্যমান। কিন্তু তার কারণ কি? উন্নয়নকে কোন চোখে দেখছে নৃবিজ্ঞান? আর উন্নয়নের-ই বা নৃবিজ্ঞানের দ্বারস্থ হওয়ার কি প্রয়োজন?

নৃবিজ্ঞানের সাথে উন্নয়নের সম্পর্কের জাল বোনা শুরু হয়েছিল উনিশ শতকের শুরুর দিকেই, যখন নৃবিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণার বিষয় গোষ্ঠী ও মাঠকর্মের স্থান হিসেবে বেছে নিত আদিম সমাজকে। নৃবিজ্ঞানীদের ঝোঁক ছিল মূলত সেইসব সমাজকে অধ্যয়ন করা যেগুলো তাদের মতে “অনুন্নত” বা পিছিয়ে থাকা। নৃবিজ্ঞানীদের আদিম সমাজ অধ্যয়নের এই প্রবণতার মূলে রয়েছে জীববিজ্ঞানী চার্লস ডারউইনের জৈবিক বিবর্তনবাদ তত্ত্ব । এই তত্ত্বের অনুকরণে নৃবিজ্ঞানী লুইস হেনরি মর্গান প্রবর্তন করেন সামাজিক বিবর্তনবাদ তত্ত্ব। মর্গানের তত্ত্ব মতে মানব সমাজ সময়ের সাথে সাথে একরৈখিকভাবে নিম্ন-স্তর থেকে উচ্চ-স্তরে বিকশিত হয়। তিনি এভাবে মানব সমাজ বিকাশের তিনটি স্তর দেখান। যথাঃ অসভ্য (savage), বর্বর (barbar) ও সভ্য যুগ (civilization)। মর্গান এবং তার সমসাময়িক নৃবিজ্ঞানী এডওয়ার্ড টাইলরসহ আরো অনেকেই তখন নিজেদের “উন্নত” সমাজের মানদণ্ড অনুসারে “অনুন্নত” হিসেবে চিহ্নিত সমাজগুলোকে গবেষণার উপযুক্ত ক্ষেত্র বলে মনে করতেন।

তবে উপনিবেশকালে কখনো কখনো নৃবিজ্ঞানীরা তাদের অনিচ্ছায় ও ভূ-রাজনৈতিক প্ররোচনায় আফ্রিকা ও এশিয়ার উপনিবেশিত সরল সমাজ অধ্যয়ন করেছেন। যেমন- ব্রনিস্লো ম্যালিনস্কি, ইভান্স প্রিচার্ড, ক্লিফোর্ড গিয়ার্টজসহ আরো অনেকে উপনিবেশিত সমাজ, সেখানকার স্থানীয় মানুষদের (native) সাংস্কৃতিক চর্চা, এমনকি রাজনৈতিক ও কৃষি ব্যবস্থাকে অধ্যয়ন করে উপনিবেশক শাসকদের পরোক্ষভাবে সাহায্য করেছিলেন। এক্ষেত্রে উপনিবেশকদের উদ্দেশ্য থাকে উপনিবেশিত অঞ্চলের “উন্নয়ন” সাধন করা। কিন্তু নৃবিজ্ঞানের সাংস্কৃতিক আপেক্ষিকতাবাদ (cultural relativism) দৃষ্টিভঙ্গি মতে, কোন অঞ্চলের উন্নয়নের ধারণা সেই অঞ্চলের রীতি-নীতি, আদর্শ, মূল্যবোধ ও সাংস্কৃতিক চর্চা অনুযায়ী নির্ধারিত হবে, ভিন্ন কোন সমাজের মানদণ্ড অনুযায়ী না। অর্থাৎ, উন্নয়ন কোন সার্বজনীন ধারণা (universal ideology) না, সংস্কৃতিভেদে এর আপেক্ষিক ধারণা বিদ্যমান।

ফলে “উন্নয়ন” এর ধারণাকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নৃবিজ্ঞানীরা অনেক হিমশিম খেয়েছেন। বিশ্ব রাজনীতিতে “উন্নয়ন” ডিসকোর্সটির সর্বপ্রথম আড়ম্বরতা শুরু হয় ১৯৪৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হ্যানরি ট্রুম্যান এর একটি ঘোষণার মাধ্যমে। তিনি “অনুন্নত” দেশগুলোর বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠনের জন্য সেই দেশগুলোর “উন্নয়নকরণ” এর উপর জোর দেন। আভিধানিক অর্থে, উন্নয়ন বলতে বোঝায় অগ্রগতির ও বিকাশের ধাপকে। আবার, অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের মতে, উন্নয়ন মানে মানুষ হিসেবে মর্যাদাপূর্ণভাবে বেঁচে থাকার সক্ষমতা অর্জন। নৃবিজ্ঞানী ক্যাটি গার্ডনারের মতে, উন্নয়নের ধারণাটি কখন, কে, কোন প্রসঙ্গে ব্যবহার করছে তা সে ব্যক্তি বিশেষ ও সময়ের উপর নির্ভর করে বদলায়। তিনি মনে করেন উন্নয়ন একটি  “slippery and elusive term”। মার্ক্সীয় ঘরানার নৃবিজ্ঞানীদের মতে, উন্নয়নের নামে পুঁজিবাদের বৈশ্বিক সম্প্রসারণ ঘটছে, যার ফলে সমাজের সকল স্তরের মানুষ এতে সমানভাবে অংশ নিতে পারছে না, বরং কোন কোন ক্ষেত্রে এটি বৈষম্যের জন্ম দিচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় উত্তরকাঠামোবাদী নৃবিজ্ঞানীরা মনে করছেন, উন্নয়ন একটি অসম সামাজিক নির্মাণ, যা অগ্রগতি ও বিকাশের প্রতিশ্রুতি দিলেও আদৌ সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। একজন মেক্সিকান নৃবিজ্ঞানী তো বলেই বসেছেন, “আপনি হয়তো অনেক ধনী নয়তো একটা নির্বোধ, যদি আপনি এটা ঠাহর করতে ব্যর্থ হন যে উন্নয়ন থেকে বোঁটকা গন্ধ বের হচ্ছে।” [“You must be either very dumb or very rich if you fail to notice that ‘development’ stinks”]।

নৃবিজ্ঞানী ডেভিড লুইস উন্নয়নের সাথে নৃবিজ্ঞানের সম্পর্ককে “uneasy relationship” হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে। তিনি উন্নয়নের সাথে পূর্বের সকল নৃবিজ্ঞানীদের সম্পর্ককে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন। যথাঃ ১) বিরোধী দ্রষ্টা (antagonistic observer); ২) অনিচ্ছুক অংশগ্রহণকারী (reluctant participants); ৩) নিযুক্ত কর্মী (engaged activists) ।

এখানে প্রথম দলে আছেন সেসব নৃবিজ্ঞানী যারা নিজেরা “উন্নয়ন” প্রকল্পে তো অংশগ্রহণ করেনই না, বরং উন্নয়নকরণের উদ্দেশ্য এবং এ্র্রর ধারণাটিকেই সমালোচনা করেন। তারা মূলত একাডেমিশিয়ান বা “খাঁটি নৃবিজ্ঞানী” (pure anthropologists) হিসেবে পরিচিত। তারা যুক্তি দেন, কোন একটি সমাজের উন্নয়নসাধনের জন্য প্রথমে সেই সমাজকে “অনুন্নত” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আর এই উন্নয়ন-অনুন্নয়নের ধারণা তৈরী হয় প্রকল্পকারীর সমাজের আদর্শের ভিত্তিতে যা একটি স্বজাতিকেন্দ্রিক (ethnocentric) আচরণ। নৃবিজ্ঞানে একটি সমাজের আদর্শ, মূল্যবোধের ভিত্তিতে অন্য একটি সমাজকে মাপলে তা স্বজাতিকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি হিসেবে নিন্দিত হয়। উল্টোদিকে, তারা সাংস্কৃতিক আপেক্ষিকতাবাদকে সাধুবাদ জানায়। ফলে “খাঁটি নৃবিজ্ঞানীরা” পশ্চিমা বিশ্বের উন্নয়নের ধারণার সমালোচনা করে ও উন্নয়নপ্রকল্পে অংশগ্রহণ না করে উল্টো বিরোধী দ্রষ্টা হিসেবে ভূমিকা পালন করে। এমনকি এসব উন্নয়নপ্রকল্পের মাধ্যমে প্রকল্পকারী গোষ্ঠী কিভাবে জ্ঞান ও ক্ষমতার জোরে “অনুন্নত” সমাজের অধিবাসীর উপর কতৃত্ব প্রয়োগ করে নিজ স্বার্থ হাসিল করে তারও অনুসন্ধান করেন এই বিরোধী দ্রষ্টার দল।

দ্বিতীয় দলের নৃবিজ্ঞানীরাও প্রথম দলের মতো উন্নয়নকে সরল চোখে দেখেন নি। কিন্তু তারা কেবল পর্যবেক্ষক না হয়ে অনাগ্রহ সত্ত্বেও উন্নয়নপ্রকল্পে অংশগ্রহণ করেছিলেন। কারণ তাদের ছিল গবেষণা অনুদানের অভাব। উনিশ শতকের শুরুর দিকে যখন নৃবিজ্ঞানের প্রাতিষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়, তখন এই যাত্রা অব্যাহত রাখতে তাদের প্রয়োজন পড়েছিল গবেষনা অনুদানের। তার আগে নৃবিজ্ঞানীরা যত গবেষণা করেছিলেন সেসবের বিষয়বস্তু ছিল ‘আদিম’ সমাজ-কেন্দ্রিক। কিন্তু উনিশ শতকের শেষে এসে ‘আদিম’ সমাজ নিয়ে উপনিবেশক রাষ্ট্রগুলোর আর আগ্রহ রইলো না। তাদের তখন আগ্রহ জন্মালো উপনিবেশিত সমাজগুলোর প্রতি। ফলে ‘আদিম’ সমাজ অধ্যয়ন করতে নৃবিজ্ঞানীরা আর তেমন কোন অনুদান পেতো না। বরং উপনিবেশিত সমাজগুলো অধ্যয়ন ও তাদের ঘিরে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়নে নৃবিজ্ঞানীদের ডাক পড়তে লাগলো। ফলে পেশা টিকিয়ে রাখতে অনেক নৃবিজ্ঞানী উন্নয়ন প্রকল্পকারীদের ডাকে সাড়া দিতে দেয়। যেমন- নৃবিজ্ঞানী ইভান্স-প্রিচার্ড ও মেয়র ফোর্টেস আফ্রিকার কিছু সমাজের জ্ঞাতিসম্পর্ক, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা অধ্যয়ন করেন। অন্যদিকে, নৃবিজ্ঞানী এরিক উলফ বৈশ্বিক উন্নয়নের আড়ম্বরে নৃবিজ্ঞানের উপযোগীতা দেখাতে আদিম সমাজ অধ্যয়ন ছেড়ে নির্দিষ্ট একটি সমাজের অর্থনীতিকে ঐতিহাসিক-রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিশ্লেষণ করেন যা উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রায়োগিক নৃবিজ্ঞানে অবদানকে ফুটিয়ে তোলে।এভাবে উনিশ শতক থেকে বিশ শতকের মাঝেমাঝে সময় পর্যন্ত নৃবিজ্ঞানীরা নানাভাবে উন্নয়ন প্রকল্পে অংশগ্রহণ করে বৈশ্বিক উন্নয়নের ধারায় তাদের স্থান নিশ্চিত করেন।

এবার আসি তৃতীয় দলের নৃবিজ্ঞানীদের কথায়। এরা সবাই উন্নয়ন-প্রকল্পে নিযুক্ত ও সক্রিয় কর্মী। বিশ শতকের শেষার্ধ থেকে “উন্নত বিশ্ব” কর্তৃক “অনুন্নত” দেশগুলোর যে উন্নয়নকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয় নৃবিজ্ঞানীরা তাতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তাদের যুক্তি হলো, নৃবিজ্ঞানের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি (আপেক্ষিক ও সামগ্রিক), পদ্ধতি (অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণ) ও জ্ঞান কাজে লাগিয়ে নৃবিজ্ঞানীরা প্রান্তিক ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কল্যাণ সাধন করতে পারে। নৃবিজ্ঞানীদের সাহায্য ছাড়া প্রশাসন ও উন্নয়ন প্রকল্পকারী গোষ্ঠী অন্য সমাজের সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে না-ও বুঝতে পারে। ফলে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো ব্যর্থ হবার সুযোগ থাকে। এক্ষেত্রে নৃবিজ্ঞানীরা যুক্তি দেয় তাদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এবং তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে যদি উন্নয়ন প্রকল্পগুলি সাজানো হয়, তবে তা উন্নয়ন বৈষম্যকে পাশ কাটিয়ে সমাজের সকল স্তরের মানুষের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে। যেসকল নৃবিজ্ঞানীরা এভাবে উন্নয়ন প্রকল্পের নকশাকারী, পরামর্শকারী এবং সাংস্কৃতিক অনুবাদক হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন তাদেরকে বলা হয় প্রায়োগিক নৃবিজ্ঞানী। অর্থাৎ, তারা নৃবিজ্ঞানের জ্ঞান, দৃষ্টিভঙ্গি ও গবেষণা পদ্ধতি প্রয়োগ করে বাস্তব জগতের সমস্যা সমাধানে অবদান রাখেন ও উন্নয়ন সাধন করেন। বলা বাহুল্য, নৃবিজ্ঞান মহলে খাঁটি নৃবিজ্ঞানী বনাম প্রায়োগিক নৃবিজ্ঞানীদের দ্বন্দ্ব বহুদিন যাবত চলমান। নৃবিজ্ঞানী শনহাত প্রায়োগিক নৃবিজ্ঞানীদের সম্পর্কে বলেছেন, তারা মূলত সমাজকর্মী ও রাজনীতিবিদ হিসেবেই অধিক বিবেচিত; খাঁটি নৃবিজ্ঞানীদের মহলে তাদের গ্রহণযোগ্যতা নেই। অন্যদিকে প্রায়োগিক নৃবিজ্ঞানীরা মনে করছেন, খাঁটি নৃবিজ্ঞানী তথা একাডেমিশিয়ানরা যেখানে উন্নয়নের নিছক সমালোচক ও নীরব দর্শক হিসেবে বসে আছেন, উন্নয়নে নিযুক্ত নৃবিজ্ঞানীরা সেখানে “উন্নয়ন বৈষম্য” দূরীকরণে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখছেন।

উন্নয়ন বৈষম্যছাড়াও উন্নয়নের বিরূদ্ধে নৃবিজ্ঞানীদের রয়েছে আরো অনেক অভিযোগ। তার অন্যতম হচ্ছে “উন্নয়ন বিপর্যয়” (development disaster) । অর্থাৎ, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে সেই অঞ্চলে যে সমস্যা বা দুর্দশার সূচনা হয়। যেমন- রাজশাহী অঞ্চলে সাঁওতাল আদিবাসী বসবাসকৃত একটি গ্রামে বিদ্যুতায়নকে ঘিরে একটি গবেষণা পরিচালিত হয়। সেখানে দেখা যায়, ২০১৪-১৫ সালে গ্রামটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ আসে এবং এর মাধ্যমে গ্রামের মানুষদের উন্নয়নমুখী করে তোলা হয়। কিন্তু এরই সাথে তাদের মনে জন্ম নেয় উন্নয়ন-বাসনা, যা নিত্য নতুন তাদের মাঝে চাহিদা সৃষ্টি করে। যেমন- তখন প্রতিবেশীদের মাঝে প্রতিযোগিতা তৈরী হয়ে যায় কে, কত দ্রুত তার গৃহে বিদ্যুৎ সংযোগ নিবে। দেখা গেল, সামাজিক সম্পর্কে ভারসাম্য ও সামাজিক মর্যাদা টিকিয়ে রাখতে সামর্থ্য না থাকা সত্ত্বেও অনেকে ঋণ নিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়া শুরু করে। এছাড়াও দেখা যায় নতুন নতুন ভোক্তা-চাহিদা। তখন ঘরে ঘরে একাধিক লাইট, ফ্যান ছাড়াও টেলিভিশন, ফ্রিজের চাহিদা তৈরী হয়। উন্নয়ন-বাসনার এই জোয়ারে প্রয়োজন ও সামর্থ্য কোনটা না থাকা স্বত্বেও অনেককেই গা ভাসাতে হয়। ফলে দরিদ্র ঋণগ্রহীতার জীবনে দেখা যায় নানান দুর্দশা। এভাবেই বিদ্যুত-তাড়িত উন্নয়ন গ্রামীন জীবনে ডেকে আনে উন্নয়ন বিপর্যয়।

কোন কোন ক্ষেত্রে আবার দেখা গেছে, স্থানীয়দের জীবনপদ্ধতি সম্পর্কে বহিরাগত উন্নয়ন প্রকল্পকারীদের সঠিক ধারণা না থাকায় ও লোকায়ত জ্ঞানকে (indigenous knowledge) গুরুত্ব না দেয়ায় তাদের অনেক প্রকল্প ব্যর্থ হয়েছে। যেমন- লোকায়ত জ্ঞান নিয়ে গবেষণাকারী রবার্ট চেম্বার্স তার Whose Knowledge লেখায় দেখিয়েছেন, উন্নয়ন প্রকল্পকারী গোষ্ঠী (যারা সাধারণত “উন্নত সমাজ” এর সদস্য) তাদের আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে নিজেদের উন্নয়ন পরিকল্পনাকে শ্রেষ্ঠ ও স্থানীয়দের চর্চাকে কুসংস্কার বলে গণ্য করে। তিনি অনেকগুলো কেইস দেখিয়েছেন যেখানে লোকায়ত জ্ঞান ও চর্চাকে গুরুত্ব না দেয়ায় তাদের উন্নয়ন পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। একটি কেইসে দেখা যায়, সেনেগালের বন বিভাগের কর্মকর্তারা বৃক্ষ রোপণ বিষয়ক একটি উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নেয় যাতে তারা সেনেগালের পুরুষদের অন্তর্ভুক্ত করলেও নারীদের করে নি। তাদের যুক্তি ছিল যে নারীরা তো আবাদী কাজ করে না। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে সে অঞ্চলে নারীরাই বরং বৃক্ষ রোপণ বেশি করতো। এমনকি বন বিভাগের বাঙলোগুলোতেও নারীরাই নিয়মিত গাছ লাগিয়ে, পরিচর্যা করে আসছে।

অনুরূপ আরেকটি ঘটনা দেখা যায় টাঙাইলের মধুপুর শালবনে। সেখানে বাস করে গারো আদিবাসী গোষ্ঠী। বহুবছর ধরে শালবনকে ঘিরে তাদের জীবন ও জীবকা নির্বাহ হয়ে আসছে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে উন্নয়নের নামে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের কর্তৃত্বমূলক আচরণ ও সরকারের নতুন নতুন উন্নয়ন প্রকল্প স্থানীয় অধিবাসীদের জীবনযাপনে সংকট তৈরী করছে। যেমন- সামাজিক বনায়ন। এটি এমন একটি উন্নয়ন প্রকল্প যেখানে শালবন থেকে প্রাচীন ঐতিহ্যবহনকারী গাছগুলো কেটে তাতে সরকারি উদ্যোগে বিদেশী গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে, কিন্তু এই উদ্যোগ গারোদের জীবন ধারণ পদ্ধতি, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও শালবনের বাস্তুতন্ত্রে যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে তা উপেক্ষা করা হয়েছে। সম্প্রতি আরেকটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে যে শালবন উজাড় করে সেখানে কৃত্রিম লেক বানানো হবে। ফলে পর্যটক বাড়বে এবং ওই অঞ্চলের উন্নয়ন হবে। কিন্তু এই পরিকল্পনায় উপেক্ষা করা হয়েছে স্থানীয়দের মতামত। বরং উন্নয়ন প্রকল্পে বাঁধা দিলে ও এর বিরূদ্ধে প্রতিবাদ জানালে স্থানীয়দের আইনের আওতায় আনার হুশিয়ারিও দেয়া হয়। এভাবে উন্নয়ন প্রকল্প থেকে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের স্থানীয়দের ছাঁটাই করে কেবল উপর মহল থেকে এর নকশা সাজানো হয়। ফলে সেই উন্নয়ন আদতে টেকসই হয় না।

বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় পূর্বাভাস ও আশ্রয়কেন্দ্রের কার্যকারিতা নিয়ে ফিলিপ হওয়েল একটি গবেষণা করেছেন। তার গবেষণায় দেখা যায় বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়ের সঠিক পূর্বাভাস নিশ্চিতকরণ হলেও অধিকাংশ সময় স্থানীয় মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে পৌছাতে পারেনি। তার কারণ হলো সেসব পূর্বাভাস স্থানীয়দের বোধগম্যই ছিল না। ঘূর্ণিঝড়ের বৈজ্ঞানিক সংকে্তের সাথে তারা পরিচিত না। ঘূর্ণিঝড়ের পুর্বাভাস পেতে তারা লোকায়ত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার উপর অধিক নির্ভরশীল ছিল। যেমন- গরম বাতাস গায়ে লাগা, সমুদ্র থেকে কাকড়া উঠে আসা, তীরে তীরে মাছ জড়ো হওয়া, সারি বেঁধে পিঁপড়ার চলা ইত্যাদি। ফলে সঠিক সময়ে সংকেত জারি হলেও তারা যথাসময়ে তা বুঝতে পারেনি। তাই ফিলিপ হওয়েল তার গবেষনাপত্রে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র উন্নয়নের পাশাপাশি লোকায়ত জ্ঞানকে গুরুত্ব দিয়ে এর সমন্বয়ে পূর্বাভাস জারির পরামর্শ দিয়েছেন।

একবিংশ শতকের শুরুতেই যুক্তরাষ্ট্রের তেল কোম্পানি শেভরন (Chevron) বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলায় একটি গ্যাস ক্ষেত্র প্রতিষ্ঠা করেন। তার কিছুদিন পরই তারা নৃবিজ্ঞানী ক্যাটি গার্ডনারকে নিযুক্ত করে বাংলাদেশে পাঠান গবেষণার মাধ্যমে গ্যাস ক্ষেত্রটি সম্পর্কে স্থানীয় মানুষদের অনুভূতি জানতে। গার্ডনার গবেষণা শেষ করে চুক্তি মতে শেভরনকে একটি রিপোর্ট শেষ করেন। কিন্তু একজন নৃবিজ্ঞানী হিসেবে তিনি মনে করেন তার এখনো একটি দায় থেকে যায়। পরবর্তীতে ২০১২ সালে তিনি সেই মাঠকর্মে নিজের অভিজ্ঞতা, স্থানীয়দের কথা ও তাদের উন্নয়ন বাসনার গল্প নিয়ে একটি বই প্রকাশ করেন Discordant Development নামে। সেখানে তিনি দেখান গ্যাস ক্ষেত্রটিকে ঘিরে উক্ত অঞ্চলের সকলের মনে উন্নয়ন বাসনা জন্মালেও কিভাবে অল্প কিছু মানুষ কেবল “যোগাযোগ” (connection) এর ভিত্তিতে সেই উন্নয়নে অংশ নিতে পেরেছি। এজন্য ক্যাটি গার্ডনার উন্নয়নকে সঙ্গায়িত করতে গিয়ে বলেন, উন্নয়নের ধারণা একেক জনের কাছে একেক রকম এবং এটি একেকভাবে ধরা দেয়।

পশ্চিমা সমাজে চিন্তার আদিকল্পের পরিবর্তন (paradigm shift) অনুসারে, উন্নয়নকে যদি একটি আধুনিক ধারণা হয়, তবে এর সমালোচনা আধুনিকতাবাদী ধারণার গন্ডি ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে উন্নয়ন ধারণাটি বিশেষ করে উত্তর-কাঠামোবাদী সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছে। কলাম্বিয়ান নৃবিজ্ঞানী আর্তুরো এস্কোবার এর মতে, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হচ্ছে ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। দার্শনিক মিশেল ফুকোর ইতিহাস, জ্ঞান ও ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্যকার বিশ্লেষণ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এস্কোবার উন্নয়ন ডিস্কোর্সের উত্তরকাঠামোবাদী সমালোচনা করেন। তিনি একটি মডেলের মাধ্যমে দেখান কিভাবে কোন কিছুর “উপস্থাপন” পরবর্তীতে বাস্তবতাকে রূপ দেয় এবং সেই অনুয়ায়ী কাজকেও প্রভাবিত করে। তিনি তিনটি ধাপের মধ্য দিয়ে তার মডেলটি ব্যাখ্যা করেন। মডেলটিতে দেখা যায়, প্রথম ধাপে ক্ষমতার উপর মহলে বসে বড় বড় প্রতিষ্ঠান ও উন্নয়ন সংস্থা কিছু শক্তশালী জ্ঞান ও ধারণা তৈরী করে যার উপস্থাপনের মাধ্যমে বাস্তব জগতে সামাজিক পরিচয় নির্মিত হয় ও সামাজিক সমস্যা চিহ্নিত হয়। যেমন ধরুন- প্রথম ধাপে “উন্নত বিশ্ব” কর্তৃক উন্নয়ন-অনুন্নয়নের ধারণা তৈরী হয় যা দ্বিতীয় ধাপে কিছু দেশকে “অনুন্নত” হিসেবে চিহ্নিত করে এবং সেসব দেশের মানুষদের সাথে তাদের সামাজিক সম্পর্কের ক্রমোচ্চ শ্রেণীবিভাগ (hierarchical social relation) তৈরী করে। তৃতীয় ধাপে “উন্নত বিশ্ব” কর্তৃক নির্মিত উন্নয়নের এই ডিস্কোর্সের উপর ভিত্তি করে চিহ্নিত “অনুন্নত” সমাজে উন্নয়ন-প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয় এবং সেসব প্রকল্প বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থার সাহায্য নেয়া হয়। এস্কোবারের এই মডেলটির মধ্য দিয়ে উন্নয়ন এর ধারণা তৈরী থেকে শুরু করে এর বাস্তবায়নের একটি কাঠামোবাদী রূপরেখা পাওয়া যায় যার মধ্য দিয়ে ক্ষমতার নিচের স্তরে থাকা মানুষদের উপর ক্ষমতার শীর্ষে থাকা জনগোষ্ঠী (পশ্চিমা সমাজ) কর্তৃত্ব চর্চা করে। তিনি এই মডেলটির মধ্য দিয়ে উন্নয়নের সাথে জ্ঞান ও ক্ষমতা চর্চার সম্পর্ক দেখিয়ে উন্নয়নের ডিস্কোর্সকে চ্যালেঞ্জ করেছেন।

উন্নয়নের উত্তরকাঠামোবাদী সকল চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে একবিংশ শতকে “উন্নয়ন” শব্দটির আগে “টেকসই” শব্দটি জুরে দেয়া হচ্ছে। “টেকসই উন্নয়ন” বা Sustainable development এখন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলির উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে মুখ্যম হাতিয়ার। ব্রান্ডল্যান্ড কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, টেকসই উন্নয়ন হচ্ছে উন্নয়নের সেই রূপ যা ভবিষ্যত প্রজন্মের চাহিদার যোগানকে অক্ষত রেখে বর্তমানের চাহিদা মেটাতে সক্ষম। কিন্তু অস্ট্রিয়ায়র নৈরাজ্যবাদী দার্শনিক ইভান ইলিচসহ আরো অনেকের মতে, টেকসই উন্নয়নও তার প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ। তারা মনে করছেন এটি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উপর উন্নয়ন সংস্থাগুলি কর্তৃত্ব বজায় রাখার এক নতুন কৌশল মাত্র। নৃবিজ্ঞানীদের মতে, টেকসই উন্নয়নের ধারণাটিও স্বচ্ছ না। তারা “টেকসই” কথাটির বৈশ্বিক অর্থ নিয়ে চিন্তিত। যেমন ধরুন- কোন একটি উন্নয়ন কাজ কত বছর স্থায়ী হলে তাকে আমরা “টেকসই” বলবো? সব সংস্কৃতির মানুষের চাহিদা এবং টেকসই এর ধারণা ও তো এক না। ফলে প্রশ্ন রয়েই যায়, টেকসই উন্নয়নের টেকসই কি কেবলই একটি ফাঁদ? ২০০০ সালে ‘ম্যালিনস্কি এওয়ার্ড লেকচার’-এ একজন নৃবিজ্ঞানী কোস্টা-রিকার টেকসই উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে কথা বলেন। তিনি সেই প্রকল্পের “টপ-ডাউন এপ্রোচ” এবং পলিসি নির্মাতাদের একপাক্ষিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সমালোচনা করেন। তিনি টেকসই উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং এ বিষয়ক নীতিমালা তৈরীতে নৃবিজ্ঞানীদের অন্তর্ভুক্তকরণের পরামর্শ দেন।

উত্তর-আধুনিক যুগে নৃবিজ্ঞানীদের কেউ কেউ উন্নয়ন প্রকল্পে সক্রিয়ভাবে নিযুক্ত থাকলেও তারা আর আগের মতো উপর মহলে বসে তৈরী করা উন্নয়নের নকশা অনুসরণ করতে রাজী নন। এটিকে তারা বলেন “টপ-ডাউন এপ্রোচ”। এই পদ্ধতিতে দেখা যায়, ক্ষমতার চূড়ায় বসে কর্তৃপক্ষ উন্নয়ন প্রকল্পের নকশা করে, যা বাস্তবায়িত হয় নিচের স্তরে। এর বদলে এখন নৃবিজ্ঞানীদের প্রস্তাবিত পদ্ধতিটি হচ্ছে “বটম-আপ এপ্রোচ”। এই পদ্ধতিতে নৃবিজ্ঞানীরা পরিকল্পনার নকশা শুরু করেন নিচের স্তর থেকে। অর্থাৎ প্রথমেই স্থানীয় মানুষদের মতামত, সাংস্কৃতিক চর্চা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তাদের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের একটি নকশা সাজানো হয় যা পরে উপর স্তরে কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করে বাস্তবায়নের আহবায়ন করা হয়। নৃবিজ্ঞানী পল সিলিটো এই পদ্ধতিতে প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানের সাথে লোকায়ত জ্ঞানকে সমন্বয় করে উন্নয়ন পরিকল্পনার প্রস্তাব দিয়েছেন। তার মতে, উন্নয়ন প্রকল্পে লোকায়ত জ্ঞানের ব্যবহারের ফলে সংশ্লিষ্ট স্থানীয়দের মনে তা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। যেমন- এর মাধ্যমে স্থানীয়রা সেসব প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার স্বাদ পাবে। তারা আর আগের মতো উন্নয়ন প্রকল্প থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন ভাববে না। ফলে প্রকল্প সফল ও টেকসই করতে স্থানীয়রাও সহযোগিতা করবে। লোকায়ত জ্ঞানের সমন্বয়ের মাধ্যমে উন্নয়ন প্রকল্প আরো কার্যকর হবে।

পল সিলিটোর মতে, এই সমন্বয়-সাধনের কাজটি করতে হবে নৃবিজ্ঞানীদের। কারণ, নৃবিজ্ঞানীদের গবেষণা পদ্ধতিই এমন যে তাদেরকে দিনের পর দিন একটি নির্দিষ্ট সমাজের মানুষের মাঝে বাস করে, অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। এরপর সেসব তথ্যকে সাংস্কৃতিক আপেক্ষিকতাবাদ ও সামগ্রিকতাবাদ দৃষ্টিতে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করতে হয়। ফলে নৃবিজ্ঞানীরাই গবেষণার মাধ্যমে একটা সংস্কৃতির লোকায়ত জ্ঞানকে যথাযথভাবে নথিভুক্ত করতে পারে। আর উন্নয়ন প্রকল্পে এটিই হতে পারে নৃবিজ্ঞানীদের অবদান রাখার উপযুক্ত জায়গা।

টীকাঃ

১) এরিক ওলফের এই বইটির নাম – Europe and the people without history (১৯৮২)।

২) নৃবিজ্ঞানীর যখন একটা সংস্কৃতিকে অধ্যয়ন করে তার নীতি-রীতি, আদর্শ, মূল্যবোধ ও চর্চাকে গবেষক কিংবা উন্নয়ন প্রকল্পকারী গোষ্ঠীর জন্য বোধগম্য করে উপস্থাপন করে তখন তাদের বলা হয় সাংস্কৃতিক অনুবাদ (cultural translator)।

৩) মার্ক্সবাদী দৃষ্টিতে উন্নয়নের ফলে সমাজে যে বৈষম্যের দেখা দেয়।

৪) এই বিষয়ে এন্থ্রো সার্কেলে প্রকাশিত একটি লেখার লিংকঃ https://anthrocircle.com/?p=815 ।

৫) এখানে যোগাযোগ বলতে কর্তৃপক্ষের সাথে স্থানীয়দের পরিচিতি ও সখ্যতা বুঝানো হয়েছে।

৬) Development is a language of power।

৭) How “representations” shape reality and influence actions।

৮) Sustainable development “meets the needs of the present, without compromising the ability of future generations to meet their own needs”।

তথ্যসূত্রঃ

১। Bozzoli, M.E., 2000. 2000 ‘Malinowski Award Lecture: A Role for Anthropology in Sustainable Development in Costa Rica’. Human organization, 59(3), pp.275-279.

২। Chambers, R., 1983. ‘Whose Knowledge’. In: ‘Rural Development: Putting the Last First’. Routledge: Taylor & Francis Group. pp.75-100.

৩। Escobar, A., 1984. ‘Discourse and power in development: Michel Foucault and the relevance of his work to the Third World’. Alternatives, 10(3), pp.377-400.

৪। Escobar, A., 1995. ‘Encountering development: the making and unmaking of the Third World’. Princeton, NJ: Princeton University Press.

৫। Ferguson, J. 1996. ‘Development’. In ‘Encyclopaedia of social and cultural anthropology’ (eds) A. Barnard and J. Spencer. London: Routledge.

৬। Gardner, K., 2012. ‘Discordant Development: Global Capitalism and the Struggle for Connection in Bangladesh’. Pluto Press.

৭। Gardner, K. & Lewis, D., 2015. ‘Anthropology and Development Challenges for the Twenty-First Century’. Pluto Press.

৮। Howell, P., 2013. ‘Indigenous Early Warning Indicators of Cyclones: Potential Application in Coastal Bangladesh’. Benfield Hazard Research Center.

৯। Illich, I., 1997. ‘Development as Planned Poverty’. In: ‘The Post-Development Reader’. London: Zed Books. pp.94–102.

১০। Lewis, D., 2005. ‘Anthropology and development: the uneasy relationship’. In: James, G.C., ed. ‘A Handbook of Economic Anthropology’. Edward Elgar Publishing Limited. pp.472-486.

১১। Sillitoe, P., 2006. ‘Introduction: Indigenous Knowledge in Development’. Anthropology in Action. Vol:13,3. pp.1–12.

১২। দেব, তিথি., ২০২১. ‘বিদ্যুৎ-তাড়িত উন্নয়ন ও প্রান্তিক মনের বাসনা বিন্যাস’. নৃবিজ্ঞান পত্রিকা. ভলিউম-২৬. পৃষ্ঠা ১৫-২৬.